পার্ক-খেলার মাঠে বৈষম্য দূর করতে টেকসই পরিকল্পনা জরুরি
ঢাকা মহানগরীর সকল এলাকায় পার্ক-খেলার মাঠ ব্যবহারে বৈষম্য দূর করতে যথাযথ বিনিয়োগ ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বনানীর একটি হোটেল ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এবং নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ মত দেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যার চাহিদার তুলনায় আমাদের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের পার্ক, খেলার মাঠ, গণপরিসরের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। পার্ক, খেলার মাঠ, গণপরিসর এর সুবিধাদির ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক বৈষম্য দৃশ্যমান। উন্নত এলাকায় পার্ক-খেলার মাঠ আছে, কিন্তু অনুন্নত ও অপরিকল্পিত এলাকায় সংকট অতি তীব্র। পরিকল্পনামাফিক নতুন খেলার মাঠ-পার্ক তৈরির উদ্যোগ অতি স্বল্প। পুরনো খেলার মাঠ, পার্কের উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যা সাধুবাদযোগ্য। এই উদ্যোগে কিছু এলাকায় এলাকাবাসীর খেলা ও বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। আবার এ ধরনের প্রকল্প অনেক ব্যয়বহুল এবং ভারী নকশার কারণে পার্ক-খেলার মাঠ দীর্ঘদিন বন্ধ থেকেছে এবং থাকছে। এ ধরনের পার্ক-খেলার মাঠের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, অনেক খেলার মাঠকে উন্নয়ন প্রকল্পের নতুন নকশায় মাল্টিপারপাস তথা বহুবিধ ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এতে ক্ষেত্রবিশেষে নতুন ধরনের ব্যবহারকারী বেড়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে খেলার মাঠ সংকুচিত হয়ে খেলাধুলার সুযোগ অনেক কমে যাচ্ছে। উন্নয়নকৃত খেলার মাঠ পার্ক এ ক্ষেত্রবিশেষে প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সংকুচিত। ঘাস নষ্ট হয়ে যাওয়ার অজুহাতে অনেক খেলার মাঠে খেলতে দেওয়া হয় না। উন্নয়নকৃত খেলার মাঠ-পার্ক অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ মহলের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়ছে, ফলে বাড়ছে বৈষম্য।
বিজ্ঞাপন
মূল প্রবন্ধে আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, খেলার মাঠকে আধুনিক নগর পরিকল্পনায় বিনোদন সুবিধার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ১ ঘণ্টা করে খেলাধুলা ও শারীরিক সক্রিয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা (খেলার মাঠ, পার্ক ইত্যাদি) থাকা উচিত। এই হিসেবে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য সোয়া দুই একর খোলা জায়গা এবং এক একর খেলার মাঠের প্রয়োজন।
ইউএন-হ্যাবিটেট এর মতে, হাঁটা দূরত্বে খেলার মাঠ, সবুজ এলাকা থাকা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী যে কোনো আবাসন এলাকার ন্যূনতম ১০ ভাগ খেলার মাঠ-পার্ক প্রভৃতি সুবিধাদির জন্য বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইপিডি উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতি সাংবাদিক অমিতোষ পাল, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক মুশতাক হোসেন, আইপিডি পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
এএসএস/এসকেডি