গাড়িতে মাস্কবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

সোমবার (৫ এপ্রিল) দুপুর ২টা। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে অভিযান পরিচালনা করছিল র‍্যাব। তখনই শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাবের দিকে একটি লাল প্রাইভেট কার যাচ্ছিল। গাড়ির চালক ও তার পাশের সিটে বসা যাত্রী কারো মুখেই নেই মাস্ক।

এই দেখে তাদের আটকে দিল র‍্যাব। চালককে দেখেও অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৩-১৪ বছর) মনে হচ্ছিল। যাত্রী এবং চালক দুজন সম্পর্কে বাবা-ছেলে। সামনে এগিয়ে গেলেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। জিজ্ঞেস করলেন, ‘মাস্ক নেই কেন? কোথায় যাচ্ছেন?’

জবাবে চালকের পাশের সিটে থাকা বাবা উত্তর দিলেন, ‘আমাদের বাসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনেই (পরীবাগ)। লকডাউনে একটু আশপাশে ঘুরতে বের হয়েছিলাম।’ সঙ্গে সঙ্গেই দুজনকে মাস্ক পরালো র‍্যাব। করা হলো জরিমানা।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাড়িটি যে চালাচ্ছিল, তার বয়স আনুমানিক ১৩-১৪ বছর। র‍্যাব সদস্যরা জিজ্ঞেস করলেন, এত ছোট বাচ্চা কেন চালাচ্ছে? জবাবে বাবা বললেন, ‘আমি ভালো চালাতে পারি না। তাই তাকে দিয়ে চালাচ্ছি।’

পরে দুজনকে মাস্ক পরিয়ে জরিমানা করে র‍্যাব। এরপর অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেটিকে পেছনের সিটে বসিয়ে গাড়ির চালকের আসনে বসেন র‍্যাব সদস্যের একজন। গাড়িটি চালিয়ে তাদের বাড়ি পৌঁছে দেন।

অভিযানে অকারণে ঘোরাঘুরি, মাস্ক না পরা, মোটরসাইকেলে যাত্রী বহনের অপরাধে ২৫ জনকে জরিমানা করেছে র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের মধ্যে অধিকাংশই মোটরসাইকেল চালক। জরিমানার কবলে পড়াদের তালিকায় আছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরাও। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।

অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লকডাউনে যারা বিনা কারণে বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন, তাদের সচেতন করা হচ্ছে, যাতে তারা বাইরে না আসেন। মূলত জরিমানা করাই র‍্যাবের উদ্দেশ্য নয়। র‍্যাবের উদ্দেশ্য, করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।’

চলছে ৭ দিনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাত দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আজ ভোর ৬টা থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর করা হচ্ছে। নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল থেকে সবধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ আছে। বন্ধ হয়ে গেছে আন্তঃজেলা বাস-ট্রেন-লঞ্চ চলাচল। 

ভোর ৬টা থেকে রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, বাড্ডা এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখা গেছে রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাঁকা। অল্পকিছু ব্যক্তিগত যান চললেও কোনো গণপরিবহন দেখা যায়নি। জায়গায় জায়গায় চলছে পুলিশি তল্লাশি। ব্যক্তিগত গাড়ি আর রিকশায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না- তা কঠোরভাবে তদারকি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুয়েকটি ভাড়া করা বাস চলতে দেখা গেছে। 

বেলা বাড়তেই মানুষ বেড়েছে সড়কে 

চলাফেরায় এ বিধিনিষেধের প্রথম দিন (সোমবার) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডি, আসাদগেট, কলাবাগান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ, কাঁচাবাজার খোলা। মানুষের উপস্থিতিও অন্যান্য দিনের মতোই।

সেইসঙ্গে অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে বাড়ছে চাকরিজীবী মানুষের সংখ্যাও। শুধু চলছে না গণপরিবহন। তাই যথাসময়ে অফিসে ও গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে রিকশা, সিএনজি ও অফিস থেকে সরবরাহকৃত নিজস্ব পরিবহনের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। 

প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেলসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও সড়কে প্রচুর। তবে চাকরিজীবীরা বলছেন, গণপরিবহন বন্ধ রেখে অফিস খোলা রাখায় দুর্ভোগ বেড়েছে তাদের।

এআর/এফআর