‘বন্দরের আয়ের একটি অংশ পেলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন আরও বাড়বে’
মহিবুল হাসান চৌধুরী
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে ঢাকার মতো শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি নেই। এজন্য আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে রাজস্ব খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। বিশেষ করে- বন্দরের আয়ের একটি অংশ চসিক পেলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রম আরও প্রসারিত হবে। জনসেবা বাড়াতে চসিকের অভিযোগ সুরাহা ও নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। জনগণের অর্থ জনস্বার্থে ব্যয় হচ্ছে কী না তা নিশ্চিতে জনপ্রতিনিধিদের মনিটরিং বাড়াতে হবে।’
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনের একটি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘স্থানীয় সরকার দিবস’ পালনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে চসিক।
বিজ্ঞাপন
সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে চসিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
বিজ্ঞাপন
রোববার সকালে রঙিন বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় চসিকের ‘স্থানীয় সরকার দিবস’ উদযাপন। নগরের লালদিঘী মাঠ থেকে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা থিয়েটার ইন্সটিটিউটে শেষ হয়।
এর আগে, লালদিঘীর চসিক লাইব্রেরি ভবনে দিনব্যাপী ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা মেডিক্যাল ক্যাম্পের (ডেঙ্গু টেস্ট, চক্ষু ও শিশু স্বাস্থ্য) উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এরপর থিয়েটার ইন্সটিটিউটে প্রধান অতিথি হিসেবে মেয়র রেজাউল মুখে খাওয়া কলেরা টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনের পর ‘সেবা ও উন্নতির দক্ষ রূপকার উন্নয়নে উদ্ভাবনে স্থানীয় সরকার’ প্রতিপাদ্য শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নেন।
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন, সমস্যা এবং তা উত্তরণের উপায় সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত থাকেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বেশি সুফল পাবে।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের উন্নয়নে চসিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে কেবল রাজস্ব আয়ের ওপর নির্ভর করায় চসিকের পক্ষে এত বড় শহরের কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। চসিক যে রাস্তাগুলো তৈরি করে, বন্দরের ভারি গাড়ি চলার কারণে শহরের সে রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল রাখতে বন্দরের কাছ থেকে চার্জ আদায়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছি। আমাদের রাজস্ব আয়ের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতকেও এগিয়ে নিচ্ছি। আধুনিকায়ন করা হচ্ছে নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। হোল্ডিং ট্যাক্সকে যথাযথকরণ করে সহনীয় পর্যায়ে কর আদায় করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে নানন্দিক চট্টগ্রাম গড়তে কাজ করছি আমরা।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আর এ লক্ষ্যে সরকার প্রথমবারের মতো ‘স্থানীয় সরকার দিবস’ পালন করছে। সরকার চায়- যারা সাধারণ মানুষ, তাদের ভাগ্য বদলের মাধ্যমে শহরের সুযোগ-সুবিধাকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যেতে।’
সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার যে সমস্ত কার্যক্রম গ্রহণ করে, তার সুফল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উন্নত দেশ গড়তে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।’
অনুষ্ঠানে ‘সেরা করদাতা’ হিসেবে চারজন ব্যক্তি ও তিনটি প্রতিষ্ঠানের হতে মেয়র রেজাউল করিম পুরষ্কার তুলে দেন। এছাড়া স্মার্ট সিটি কার্যক্রমে অবদান রাখায় প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল ও জনসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্যে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও রূপরেখা তুলে ধরেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, সমাজ কল্যাণ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি আবদুস সালাম মাসুম, স্বাস্থ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী।
/এমআর/এফকে/