দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এ অবস্থায় সংক্রমণ রোধে ঘরে ঘরে সচেতনতার বার্তা পৌঁছাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক।

জানা গেছে, ছয়টি জেলায় কমিউনিটির অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির অধীনে গঠিত সামাজিক সহায়তা দল। যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) অর্থায়নে ‘কমিউনিটি মোবিলাইজেশন এবং কমিউনিটি ক্লিনিক শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে কোভিড-১৯ রেসপন্স’ নামক  প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাট, ভোলা, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও বগুড়ার ৫১টি উপজেলায় কাজ করছে ব্র্যাক। অন্য প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরের দুটি উপজেলায় স্বাস্থ্যবার্তার মাধ্যমে মানুষের আচরণগত পরিবর্তনে কাজ করছেন সংস্থাটির কমিউনিটি কর্মীরা। ‘কমিউনিটি-বেজড কোভিড-১৯ রেসপন্স প্রজেক্ট’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই গাজীপুরের কালিগঞ্জ এবং কাপাসিয়া উপজেলায় নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করছে ব্র্যাক।

ব্র্যাক সূত্র জানিয়েছে, বাগেরহাট, ভোলা, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও বগুড়ায় দুইজন করে কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর মাধ্যমে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। ‘কমিউনিটি মোবিলাইজেশন এবং কমিউনিটি ক্লিনিক শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে কোভিড-১৯ রেসপন্স’ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ব্র্যাক কাজ করছে। এই টিমগুলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলছে এবং নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। এসব পরিবারে করোনাভাইরাস লক্ষণযুক্ত ব্যক্তি আছে কি না তাও জানার চেষ্টা করছে টিমের সদস্যরা। যদি লক্ষণযুক্ত কেউ থাকেন তবে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে সুপারিশ করা হচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় গঠন করা হচ্ছে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ কমিটি। এই কমিটিতে থাকছেন গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিরা। সাধারণ মানুষকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং হাত ধোয়ার চর্চাসহ বিভিন্ন সতর্কবার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন কমিটির সদস্যরা। এছাড়া আক্রান্ত বা লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে।

‘কমিউনিটি মোবিলাইজেশন এবং কমিউনিটি ক্লিনিক শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে কোভিড-১৯ রেসপন্স’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫১টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ২৭ হাজার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়েছে এবং বাসায় বিভিন্ন সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১২ লাখ পরিবারের সদস্যদের হাত ধোয়ার চর্চা, কাশির শিষ্টাচার, মাস্কের ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ করোনাভাইরাস রোধে স্বাস্থ্যবিধির বার্তাগুলো পৌঁছে দিয়েছে ব্র্যাকের সামাজিক সহায়তা দল। এছাড়া প্রায় ১২ লাখ মাস্ক বিতরণ ও ৫০ হাজার হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে গাজীপুরেই ব্র্যাকের কমিউনিটি দল মার্চ মাস পর্যন্ত সর্বমোট ৩ হাজার ৮১২ জন ব্যক্তিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এদের মধ্যে পরে ১ হাজার ৭৫৬ জন করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। তাদের সবাইকে টেলিমেডিসিন সেবা দিয়েছে ব্র্যাক। এছাড়া তাদের বাসায় বিভিন্ন সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বলেন, সংক্রমণ রোধ, ঘরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং করোনাভাইরাসের পরীক্ষা কার্যক্রমের সুবিধার্থে হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে ব্র্যাক অন্য অংশীজনদের নিয়ে কমিউনিটিতে সহিষ্ণুতা সৃষ্টিতে কাজ করছে।

পিএসডি/এসএসএইচ