দেশের নামকরা ঝাল-মিষ্টি সব খাবার বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে
বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপনের জন্য ‘মুজিবস বাংলাদেশ’ প্রচারণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়েছে। চারদিনব্যাপী এ ফেস্টিভ্যাল ২৭-৩০ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলার নামকার ঝাল-মিষ্টি সব ধরনের খাবারের পসরা বসেছে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আসরে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আসর ঘুরে দেখা যায়, দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে যশোরের জামতলার সাদেক গোল্লা, নরসিংদী জেলার নকশি পিঠা, নাটোরের কাঁচা গোল্লা, কুষ্টিয়ার কুলফি, পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি, বাকরখানি, মুক্তাগাছার মন্ডা, চট্টগ্রামের মেজবান, খুলনার চুইঝাল, বিসমিল্লাহর কাবাব, কুমিল্লার রসমালাইসহ ৬৪টি জেলা থেকে ৭০টির বেশি ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল তৈরি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন : ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’ শুরু
যশোরের জামতলার সাদেক গোল্লা স্টলে থাকা শেখ আজহার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকায় এর আগের ফেস্টিভ্যালগুলোতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি বলেই আবার আসা। যশোরের জামতলার সাদেক গোল্লার যে স্বাদ আপনারা পেয়ে থাকেন, সেই আসল স্বাদই আপনার এখানে পাবেন। এই ফেস্টিভ্যালে অনেকে হয়তো কেজি দরে কিনবেন না। তাই তারা যেন অরিজিনাল সাদেক গোল্লার স্বাদ নিতে পারেন সেজন্য সাইজ ভেদে পিস হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে সাদেক গোল্লার বড় পিস ৫০ টাকা, মাঝারি সাইজের পিস ৩০ টাকা এবং ছোট সাইজের পিস ২০ টাকা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। দুটি ফ্লেভার রয়েছে আমাদের।
বিজ্ঞাপন
মেলায় নানা ধরনের পাপড় নিয়ে হাজির হয়েছেন দিনাজপুরের উদ্যোক্তাবর্গের পরিচালক সম্পা দাস মৌ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিনাজপুর জেলার ডিসি আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন। আমি দিনাজপুরকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য এখানে এসেছি। আমাদের দিনাজপুরের ঐতিহ্য মুগ ডালের পাপড়। আমি মুগ ডালের পাপড় নিয়ে এসেছি। এছাড়া আমাদের ঐতিহ্য কনক চোরের খই, হাতে ভাজা মুড়ি, নারকেলের নাড়ু, আমসত্ত্ব, সাবুর পাপড়, চাউলের পাপড়, আলুর চিপস, রসুনের আচার, আলুবোখারা আচার, ঘি এইসব পণ্যগুলো নিয়ে আমি এই ফেস্টিভ্যালে এসেছি।
ফেস্টিভ্যালে রয়েছে খুলনার মেসার্স আব্বাস হোটেলের ঐতিহ্যবাহী চুইঝালের খাসির গোস্ত। এর পরিচালক আলী আজগর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের চুইঝালের খাসির গোস্ত দাম ২২০ টাকা, সঙ্গে ৩০ টাকার ভাত; সব মিলিয়ে ২৫০ টাকার খাবার। আমরা খুলনাতেও এই একই খাবারই বিক্রি করি। আব্বাস হোটেল আমার দাদুর প্রতিষ্ঠান, তারপরে এটি আমার বাবা পরিচালনা করেছেন এবং এখন আমি পরিচালনা করছি। আব্বাসের চুইঝালের খাসির গোস্ত আমরা নিজস্ব কিছু মসলা দিয়ে রান্না করি, যার জন্য এটি দেশ বিখ্যাত। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আব্বাস হোটেলের কথা বলে তারা এই খাবার বিক্রি করে। তবে আব্বাস হোটেল আব্বাসই। আমাদের রান্নার সঙ্গে তাদের কোনো মিল নেই। আমরা এই মাসেই মিরপুরে একটি দোকান খুলেছি, যেন ঢাকার মানুষজন খুলনার আব্বাস হোটেলের চুইঝালের খাসির গোস্ত স্বাদ পেতে পারে।
নাটোর থেকে কাঁচাগোল্লাসহ বেশ কয়েকটি মিষ্টি আইটেম নিয়ে ফেস্টিভ্যালে হাজির হয়েছে মৌচাক মিষ্টি ভাণ্ডার। ভান্ডারের বিক্রেতা মো. শামীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাটোরের কাঁচাগোল্লা ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। নাটোরের ডিসি আমাদের অনুরোধ করেছেন এখানে আসার জন্য, সেজন্যই আমরা এখানে এসেছি। এখনও অনেকে জানেন না কাঁচাগোল্লা কেমন, তার আকার কেমন, সেটি জানানোর জন্যই আমাদের এখানে আসা। যেহেতু ফেস্টিভ্যালে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য এসেছি, তাই কেজি দরে কিনতে হবে বিষয়টা ঠিক এমন না। যে যতটুকু চায়, ততটুকু পরিমাণে বিক্রি করা হবে।
বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড (বিটিবি)।
বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ট্যুরিস্ট-ভেসেল, ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে।
এছাড়া অংশগ্রহণ করেছে বিভিন্ন জেলার পর্যটন পণ্য ও সেবা প্রদানকারীরা। দেশব্যাপী পর্যটনের বিভিন্ন অফারও আয়োজন আছে এ উৎসবে। চারদিনব্যাপী আয়োজিত বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে ২০টি হোটেল রিসোর্ট, অঞ্চলভিত্তিক খাবারের স্টল ৭০টি, ডিস্ট্রিক্ট ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় ২৯টি জেলা, ক্রাফট স্যুভিনির ২৬টি, এয়ারলাইন্স দুটিসহ বিনোদন পার্ক, ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, বিদেশি দূতাবাসসহ ১৬০টির অধিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এ উৎসব আয়োজন আছে বিভিন্ন দেশের খাবারসহ বাংলাদেশের অথেন্টিক ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের। দেশি-বিদেশি ইউনিক খাবার সম্পর্কে জানার ও উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে এ উৎসবে।
এ উৎসবে তাঁত, জামদানি তৈরির প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ রয়েছে। আমাদের ঐতিহ্য মসলিন পুনরুদ্ধার হওয়ার গল্প এবং মসলিন তৈরির প্রক্রিয়া প্রদর্শন করা হচ্ছে।
দর্শনার্থীদের তাদের আকর্ষণীয় ট্যুর প্ল্যান তৈরি করতে এ উৎসব সহায়তা করবে। তারা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাকীর্তি, পর্যটন সম্পদ সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রতিটি জেলার পর্যটন আকর্ষণের ছবি দেখার সুযোগ পাবেন।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে পর্যটক ও পর্যটন কেন্দ্রের নিরাপত্তা, আবাসন, এভিয়েশন পর্যটন খাতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা এবং পর্যটনশিল্পে নারীর অংশগ্রহণ, প্রত্ন পর্যটন, খাদ্য পর্যটন, পর্যটন ও এভিয়েশন সাংবাদিকতা, প্লাস্টিক ফ্রি সেন্টমার্টিনের বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। চারদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রয়েছে গম্ভীরা, সিলেটের আঞ্চলিক গান, গাজী কালুর পট, পথ নাটা, বাউলগান, পুথি পাঠ, কাওয়ালি এবং বিশিষ্ট শিল্পীদের গানের আয়োজন।
এমএইচএন/এসএম