ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, রাজধানীতে কোনো সংগঠন অনুমতি ছাড়া মিছিল-মিটিং করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডিএমপির অধ্যাদেশের যে নিয়ম-কানুন রয়েছে সেগুলো যদি কেউ ভঙ্গ করে তাহলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সোমবার (২ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনার বলেন, আমি যতটুকু জানি আজও ঢাকায় বিরোধী দলের একটি অনুষ্ঠান আছে। তারা অনুমতি নিয়েই কর্মসূচি পালন করছে। কোনো সংগঠন যদি অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু করতে চায়, ডিএমপির অধ্যাদেশের যে নিয়ম-কানুন রয়েছে সেগুলো যদি ভঙ্গ করতে চায় বা করে, তাহলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

এর আগে সম্প্রতি ঢাকায় অনুমতি ছাড়াই সভা-সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দেয় বিএনপি।

চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ঠেকাতে প্রয়োজনে টাস্কফোর্স

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চুরি ছিনতাই হচ্ছে। যে দিন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সেদিনও রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাই হয়েছে। এছাড়া রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই বেড়েই চলছে। এমন এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, পুলিশের কাছে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটার পরপরই জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছিনতাই কমিয়ে আনা বা জিরো পর্যায়ে আনা যায় সে প্রচেষ্টা রয়েছে। প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করে বিচার করা হবে।

জনগণ যেন নির্ভয়ে-নিশ্চিন্তে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা নেবে পুলিশ 

সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অক্টোবরে ব্যাপক আন্দোলনের শঙ্কাও রয়েছে। 

ডিএমপির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন হলো রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি। সেটি যেন সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে হয়, জনগণ যেন নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে, নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন, ভোট দিতে পারেন, পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অবৈধ অস্ত্র বা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশের দক্ষতা ও যোগ্যতা রয়েছে।

ভিসা নীতিতে চিন্তিত নয় পুলিশ

একটি দেশ ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। তাই ভিসা নীতি নিয়ে পুলিশের মধ্যে প্রভাব, প্রতিক্রিয়া বা আতঙ্ক রয়েছে কিনা? থাকলে সেটা কাটিয়ে উঠতে কীভাবে মনোবল চাঙা করার উদ্যোগ নিচ্ছেন জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, জনগণ যেন নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসে, ভোট দেন সেই ব্যবস্থা পুলিশ গ্রহণ করবে। একটি দেশ ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, একটি তাদের নিজস্ব বিষয়। সেটি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের চিন্তার কিছু নেই।  

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমি পুলিশে ভেতর এ ধরণের নীতিতে কোনো চিন্তা দেখিনি। এটি ব্যক্তি পর্যায়ের বিষয়। এটি সংগঠন পর্যায়ের কোনো ব্যবস্থা নয়। সংগঠন হিসেবে ডিএমপি নিরাপদ ঢাকা গড়ার জন্য যতকিছু দরকার তা করছে।

নগরবাসীকে সেবা প্রদান-জবাব দিতে প্রস্তুত থাকবে থানা পুলিশ 

ঢাকায় ৫০টি থানা রয়েছে। থানা পুলিশের সেবার মান বাড়াতে কী পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই আমরা থানা পুলিশের সেবার মান বাড়াতে চাই। ঢাকা শহরকে পুলিশের মডেল হিসেবে যে কোনো সেবা প্রদান ও জবাব দিতে থানা পুলিশ প্রস্তুত থাকে সেটি নিশ্চিত করা হবে। আমি মনে করি অচিরেই দেশের মানুষ সেটা দেখতে পারবেন।

ঢাকা রেঞ্জে থাকার সময় থানা পুলিশের কার্যক্রম মনিটরিং করেছেন, গারদখানাও মনিটরিং করতেন সিসি ক্যামেরায়। ডিএমপিতে থানা পুলিশের কার্যক্রম মনিটরিং করার এরকম সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই এমন কিছু করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নগরবাসীকে সেবা দিতে এর চেয়েও যদি আরও বেশি কিছু লাগে সেটা করা হবে। কারণ নগরবাসীকে সেবা নিশ্চিত করতে প্রথম ধাপ হচ্ছে থানা। এরপর জোনাল অফিসার, এডিসি, ডিসি, জয়েন কমিশনার রয়েছে। নগরবাসীর একটি লোকও যেন কখনোই বলতে না পারেন যে সমস্যার সমাধান চেয়েও পাইনি। সেটি আমরা হতে দিতে চাই না।

থানা পুলিশের সেবার মান কাঙ্খিত মানে পৌঁছাতে পারেনি। আপনি একজন পুলিশ কমিশনার হিসেবে কী ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন? যেন মানুষ মনে করে এই থানা আমার?

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ঢাকায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৭৩ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এর বিপরীতে থানায় কম জনবল রয়েছে। তাই দিবারাত্রি কাজ করতে হয়। যে কোনো সময় থানায় গেলে পুলিশের সেবা পাবেন। আমরা কখনো কখনো অভিযোগ পেয়ে থাকি। সে সব অভিযোগের যে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়না তা কিন্তু নয়। থানায় যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই জোনাল অফিসার আছে, এডিসি আছে ডিসি আছে, জয়েন কমিশনার আছে। কমিশনার পর্যন্ত যেন কোনো অভিযোগ না আসে সে জন্য আমি নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের থানার কর্মকর্তাদের ট্রেনিং দিয়ে, আচরণ উন্নত করতে নির্দেশ দিয়েছি।

ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে পদক্ষেপ

নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক। ঢাকা শহরে যানজটের ইস্যুতে স্পট ধরে ধরে সমাধান করা হবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, ক্রমবর্ধমান গাড়ির চাপ, রাস্তার স্বল্পতা এবং জনসংখ্যার চাপ দিন দিন ট্রাফিক কমানো যাচ্ছে না। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা প্রয়োগ করতে চাই। বাসস্টপে এসে বাসগুলো রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে এটি সচেতন করতে হবে। এ জন্য চালকদের ট্রেনিং দেওয়া হবে, তাদের নিয়ে কর্মশালা করা হবে। 

তিনি বলেন, পথচারী পারাপারের সময় অনেক গাড়ি স্লো হয়ে যানজট হয়ে যায়৷ অনেক সময় রাস্তার মাঝ দিয়ে নারী-শিশু দৌড়ে পারাপার হয়। আমি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করার পরে প্রথমেই মিটিং করেছি ট্রাফিকের সঙ্গে। ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে সবার সহযোগিতা চাই। 

সকল উন্নত শহরে ট্রাফিক বাতি রয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে এবং কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন হয়েছে। খুব অল্প দিনের ভেতরে আমরা ট্রাফিক বাতি চালু করা হবে। যেন সিগন্যাল বাতি অনুযায়ী ট্রাফিক কার্যক্রম করা যায়। ঢাকা শহরে যে ট্রাফিক সমস্যা তা ট্রাফিক পুলিশ একার পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়। ঢাকা শহরে কিছু উন্নয়ন কাজ চলছে। এই উন্নয়ন কাজ শেষ হলে অনেকাংশেই ট্রাফিক সমস্যা কমে যাবে। আগে কেউ চিন্তা করতে পারতো না এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট ১০ মিনিটে আসতে পারবে। এখন তা সম্ভব হচ্ছে। 

হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ট্রাফিক পুলিশকে যে পরিমাণ কষ্ট করে রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়, রমজান মাসেও তারা রাস্তায় হেটে হেটে ইফতার করে। সেই বাস্তবতাও রয়েছে। খুব অল্প দিনের মধ্যে ট্রাফিক বাতির মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করা হবে। 

মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ের ট্রাফিক যানজটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্পট ধরে ধরে সমাধান করা হবে। মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় এখনই ট্রাফিকের এডিশনাল কমিশনারকে বলবো জায়গাটা টুকে রাখতে। আজকে বিকেলে ওই জায়গা এডিসি-এসি ভিজিট করবে এবং রিপোর্ট দেবে। আগামীকাল থেকে সেটির সমাধান চাই।

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স এন্ড প্রকিউরমেন্ট) মহা. আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জেইউ/এমএসএ