উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত সহযোগিতা চাওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে খিলগাঁও থানাধীন রামপুরা বনশ্রীতে বাউবির এক শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করেন বিলকিস ওরফে তানিয়া। পরে ওই শিক্ষককে পূর্বপরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেন। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত শিক্ষককে উদ্ধারসহ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।

গ্রেপ্তাররা হলেন— বিলকিস ওরফে তানিয়া (৩০), মো. বিপ্লব (৩০), ইব্রাহিম হোসেন রাজু (২৯), লিংকন খলিফা (২৪) ও আমির শেখ (৩০)।

গ্রেপ্তারকালে তাদের নিকট থেকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ, লাঠি, হাতুড়ি ও রশি উদ্ধার করা হয়েছে।

এটিইউ'র মিডিয়া এন্ড  অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মাদ ছানোয়ার হোসেন জানান, এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সঙ্গে বিলকিস ওরফে তানিয়ার পরিচয় হয় ফেসবুকে। তানিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে।

গত ৫ অক্টোবর সকালে ঐ শিক্ষক তার এক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে খিলগাঁও থানাধীন রামপুরা বনশ্রী এলাকায় যান। সেখানে অবস্থানকালে তানিয়া বাউবিতে ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে চায় বলে ঐ শিক্ষককে খিলগাঁও থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রী ১০ তলা মার্কেটের সামনে ডেকে নেয়। 

ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষক সেখানে গেলে গ্রেপ্তার তানিয়া তাদের বাসায় যেতে বললে তিনি সেখানে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। তখন তানিয়া সেখানে আগে থেকেই ওঁতপেতে থাকা গ্রেপ্তার অন্য আসামিদের সহযোগিতায় ঐ শিক্ষককে অপহরণ করে দক্ষিণ বনশ্রী কাজীবাড়ী টিএন্ডটি টাওয়ার এলাকার একটি বাসার ৬ষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। 

সেখানে তারা ভুক্তভোগীকে হত্যার হুমকি দিয়ে হাত-পা বেঁধে লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালায় এবং অপহৃতের কাছে থাকা নগদ ৩ হাজার টাকা ও  বিকাশ একাউন্টে থাকা ২০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। 

এছাড়া ভুক্তভোগীকে নগ্ন করে মোবাইল ফোনে তার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। নির্যাতন থেকে বাঁচতে হলে গ্রেপ্তারকৃত অপহরণ চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীকে তার পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ এনে দিতে বলে। 

অপহৃত শিক্ষক বাধ্য হয়ে তার বোন জামাইকে নিজের প্রয়োজনের কথা বলে আসামিদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ২ লাখ টাকা পাঠাতে বলেন। ভুক্তভোগীর ফোন বন্ধ থাকায় এবং তিনি বাসায় না ফেরায় ভুক্তভোগীর বোন জামাইয়ের সন্দেহ হলে তিনি রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কলাবাগান থানার জিডি নং- ৩১৮।

পরদিন শুক্রবার (৬ অক্টোবর) নির্যাতন থেকে বাচঁতে অপহৃত ব্যক্তি নিজের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে পুনরায় ২ লাখ পাঠাতে বললে ভুক্তভোগীর বোন জামাই বিকাশের মাধ্যমে দুই দফায় মোট ৪৫ হাজার টাকা পাঠান। 

মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর পরও অপহৃত ব্যক্তি ফিরে না আসায় এবং সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা আরও মুক্তিপণ দাবি করতে থাকায় ভুক্তভোগীর আত্মীয়-স্বজন বিষয়টি এন্টি টেররিজম ইউনিটকে অবহিত করে।

বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে এটিইউ‘র একটি চৌকস দল। গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও নজরদারির ভিত্তিতে অপহরণ চক্র ও ভিকটিমের অবস্থান শনাক্ত করে খিলগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় খিলগাঁও থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রী কাজীবাড়ী টিএন্ডটি টাওয়ার এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার ও অপহরণ চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/এমএ