ভূমি আইনে কৃষক স্বার্থ পরিপন্থি ধারা বাতিলসহ ৬ দাবি
ভূমি আইনে কৃষক স্বার্থ পরিপন্থি ধারা বাতিলসহ ছয় দাবি জানিয়েছে চরাঞ্চল ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও কৃষিস্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটি। শনিবার (৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে সংগঠনটির নেতারা এসব দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের নদী সিকস্তি অঞ্চলে বসবাসকারী তিন কোটি মানুষ জানমালের ঝুঁকি নিয়ে সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে অনাবাদযোগ্য উঁচুনীচু জমি আবাদযোগ্য করে দেশের কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সব গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কৃষকের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুগ যুগ ধরে লড়াই করেছে। অথচ স্বাধীন দেশে আইনের মারপ্যাঁচে আজ চরের মানুষ তার পৈত্রিক জমির প্রজাস্বত্ব হারিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তারা আরও বলেন, ভূমি অফিস জেগে ওঠা চরে পূর্বর্তন মালিক বা তার উত্তরাধিকারকে জমি খারিজ দেয় না। বিগত সময়ে বিভিন্ন জরিপে নিজ নামে জমিজমা রেকর্ড করা সত্ত্বেও ভূমি অফিস খাজনাদি না নেওয়ায় এসব অঞ্চলের মানুষ জমিজমা বিক্রি করতে পারছে না। এতে এসব অঞ্চলের মানুষ জমিজমা থাকা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসা নিতে পারছে না।
বক্তারা বলেন, নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা ছাড়াই সারা দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে নদী খনন করার নামে চলছে বালু ব্যবসার মহোৎসব। বালু মাফিয়া চক্র ড্রেজিংয়ের নামে কৃষকদের কায়েমি জমি কেটে নিচ্ছে। নদীর পাড় সংরক্ষণ ও ঢালু সঠিক মাপমতো না করায় নদী খননের পরে জমিজমা ভেঙে আবার নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদীভাঙন রোধে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই। তাই নদী সিকন্তি অঞ্চলের মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় লড়াই সংগ্রামে নামতে হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তাদের দাবিগুলো হলো–
১. ভূমি আইন ২০২৩-এ ‘যখনই চর জেগে উঠবে তখনই চলতি কর পরিশোধ সাপেক্ষে প্রজাস্বত্ব বহাল হবে’ এমন বিধান রেখে অবিলম্বে সংসদে আইন পাস করা। ভূমি আইনে কৃষক স্বার্থের পরিপন্থি ধারা বাতিল করা।
২. চরাঞ্চলে ডিএস, সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড ও চিটার ভিত্তিতে প্রজাস্বত্ব বহাল ও খাজনা খারিজ চালু করা।
৩. মাদারগঞ্জে তিন ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে অন্যত্র স্থানান্তর করা।
৪. বিনা ক্ষতিপূরণে কৃষকের জমিতে কোনো প্রকল্প নয়, তিন ফসলি জমিতে প্রকল্প নেওয়া বন্ধ করা। প্রকৃত কৃষকদের সাশ্রয়ী মূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ দেওয়া।
৫. নদীভাঙন রোধে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
৬. চরাঞ্চল, বীর অঞ্চল ও শহরে ভিন্ন ভিন্ন জমির সিলিংয়ের বন্দোবস্ত রেখে সারা দেশে গ্রাম-শহরে ব্যক্তিগত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির সিলিং পুনর্নির্ধারণ করা। উদ্বৃত্ত সম্পত্তি ভূমিহীন-আশ্রয়হীন মানুষের মধ্যে বণ্টন করা।
/ওএফএ/এসএসএইচ/