জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) এবং বিভাগীয় কমিশনারদের প্রশিক্ষণ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে এ প্রশিক্ষণ দেবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দুই ধাপে মাঠ প্রশাসনের মোট ২২৫ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে দুটি করে চারটি ব্যাচে দু’দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতি ধাপে ৩২ জন ডিসি, ৩২ এসপি, চার জন করে বিভাগীয় কমিশনার ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ অন্যরা অংশ নেবেন। আগামী ১৪ ও ১৫ অক্টোবর প্রথম ধাপে এবং ২৮ ও ২৯ অক্টোবর দ্বিতীয় ধাপে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলবে। প্রথম ধাপে মোট ১১৭ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে ১০৮ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেবেন।

এ বিষয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত থাকতে পারেন। তবে পুরো কমিশন থাকবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ডিসি, এসপিসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং আমাদের কর্মকর্তা নিয়ে মোট ২২৫ জনকে নিয়ে কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে।

ইসি জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বেশ কিছু আইন ও বিধিমালার সংস্কার হয়েছে। এছাড়া, মাঠ কর্মকর্তারাও নতুন। তাই নির্বাচনের সামগ্রিক আইনকানুনের ধারণা দিতেই মূলত এ কর্মসূচি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসকরা। আর মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, প্রতীক বরাদ্দ, ফলাফল ঘোষণা প্রতিটি পর্যায়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয় আইনে নির্ধারিত উপায়ে। এজন্য নির্বাচনী আইনবিধি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা না থাকলে ভোটের আগে যেকোনো ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া পুলিশ সুপার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাই সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষা ইত্যাদি যেন ব্যাহত না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিতের দিকনির্দেশনাও দেওয়া হবে কর্মশালায়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষক তৈরির প্রশিক্ষণ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু করেছে ইসি। ডিসি-এসপিদের প্রশিক্ষণের পর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কর্মশালার দিকে নজর দেবে সংস্থাটি।

ইটিআই মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এবার ১০ লাখের মতো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। এদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরের প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সম্পন্ন হবে ভোটগ্রহণ।

এদিকে, এবারের নির্বাচনে ডিসিদের পাশাপাশি ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারাও রিটার্নিং কর্মকর্তা হওয়ার দাবি তুলেছেন। পাশাপাশি ইসির সংলাপে এসে বিভিন্ন মহল, এমনকি সাবেক নির্বাচন কমিশনাররাও একই পরামর্শ দিয়েছেন। গত বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নিয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেন, এখন নির্বাচনের পরিস্থিতি ভিন্নতর। তাই ডিসিদের পাশাপাশি নিজস্ব যোগ্য কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা না করে নিজস্ব জনবল দিয়ে করতে হবে।

তবে এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনাররা বলছেন, তাদের দাবি নিয়ে এখনো কমিশন আলোচনা করেনি। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে।

/এসআর/এসএসএইচ/