বিভেদ দূর করতে মেয়েদের আগে নিজেকে মানুষ ভাবতে হবে
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, প্রত্যেকের সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হলো নারীকে এখনো মানুষ ভাবা হয় না। নারী-পুরুষের বিভেদ দূর করতে মেয়েদের নিজেকে আগে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে। মেয়েরা যতো এগিয়ে আসছে তাদের ততো পেছনে টেনে রাখা হচ্ছে। এটা দমাতে নারীর আন্দোলন সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
সোমবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে কবি সুফিয়া কামাল ভবনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নারীর অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সমাজের প্রচলিত বৈষম্যমূলক রীতি নীতি ও প্রথার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার পাশাপাশি সমাজকে মুক্ত করতে হবে; সহিংসতার বিস্তৃত ক্ষেত্র রোধ করতে হবে; প্রথা, জীবনাচরণ পরিবর্তন করতে হবে; নারী আন্দোলনের সঙ্গে তরুণদের যুক্ত হতে হবে।
মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম বলেন, একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ও সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তরুণদের সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তা আছে। মহিলা পরিষদ সংগঠকদের আত্মউন্নয়ন ও দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য সাংগঠনিক পক্ষ পালন করে থাকে প্রতিবছর। তিনি এসময় সংগঠনের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্রের আলোকে গৃহীত কর্মসূচির সঙ্গে তরুণদের যুক্ত হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নারীরা আজ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও তার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। সব নারীর সমস্যা এক নয়। সাইবার সচেতনতা বিষয়ে নারী আন্দোলনকে কাজ করতে হবে। নারী ও পুরুষের প্রতি সমাজের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি দীর্ঘদিনের যা নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যে আছে। এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলায় নারীকে নিজেকে তৈরি করতে হবে; সামনে আসা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে অগ্রসরের ক্ষেত্রগুলোকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে।
বিজ্ঞাপন
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী তিথি দেবনাথ, সিরিয়া শবনম, লেক সার্কাস গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস; শাহজাহানপুর পাড়া কমিটির সদস্য মুন্নি আক্তার, কলাবাগান লেক সার্কাস স্কুলের শিক্ষিকা সেলিনা বেগম; বহ্নিশিখার ইসরাত জাহান, মনোবিদ নাহিদা নবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী প্রজ্ঞা লাবনী সাদিয়া; আহমেদ নগর পাড়া কমিটির সদস্য দিনা আক্তার, ব্যবসায়ী অদিতি।
তারা বলেন, মেয়েদের অগ্রগতির অবস্থানকে টেকসই করতে ঐক্যবদ্ধভাবে আরও কাজ করতে হবে; স্কুল কলেজে গিয়ে মেয়েদের জন্য ইভটিজিং, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবারের মায়েদের জন্য সভার আয়োজন করতে হবে; তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে প্রাপ্য সুযোগ দিতে হবে মানুষ হিসেবে। পরিবারে কেবল মেয়ে সন্তান থাকলে তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার দিতে হবে, সহিংসতা প্রতিরোধে অপরাধীকে শাস্তি নিশ্চিতে বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা দূর করতে হবে।
চাকরিজীবী নারীদের কাজের জন্য সুযোগ দিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বিষয় নির্ধারণে এখনো জেন্ডার গত বিভেদ করা হয় পরিবার থেকে, এবিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, শিক্ষার্থীদের অবসর সময়ে অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার পরিহার করে সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে, সৃজনশীল কাজে যুক্ত হতে হবে। মেয়েদের জন্য আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, সাইবার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
জেইউ/এমএ