সমাজসেবার কোটিপতি কর্মকর্তা বাবুল, সম্পদের হিসাব তলব
বাবুল আক্তার ডাবুল
বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা লুটপাট করে বিশালবহুল বাড়ি নির্মাণসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা অফিসার বাবুল আক্তার ডাবুল।
নিজ গ্রামে ১৫ শতাংশ জমির ওপর প্রায় দুই হাজার বর্গফুটের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, স্ত্রী আকলিমা খাতুনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে বেশ কিছু সম্পদের প্রমাণ মিলেছে দুদকের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে।
বিজ্ঞাপন
সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় বুধবার (১১ অক্টোবর) তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করতে কমিশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও মাদরাসার এতিমদের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ সংক্রান্ত একটি অভিযোগে জমা পড়ে দুদকে। ওই অভিযোগটি আমলে নিয়ে মধুখালী উপজেলায় সমাজসেবা কার্যালয়ে সরেজমিনে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
বিজ্ঞাপন
গত বছরের ১৪ জুন দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বজলুর রহমানের নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্ট টিম সংশ্লিষ্ট অফিসে অভিযান চালায়। অভিযানকালে অভিযোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। অভিযানকালে দেখা যায়, সহকারী সমাজসেবা অফিসার বাবুল আক্তার ও তার স্ত্রী আকলিমা খাতুন (ইউনিয়ন সমাজকর্মী) দীর্ঘদিন ধরে একই অফিসে কর্মরত রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও মাদরাসার এতিমদের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি অর্থ আত্মসাতের তথ্য-প্রমাণও পাওয়া যায়।
অভিযানকালে দুদক টিম সরেজমিনে তাদের গ্রামের বাড়ি মধুখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে গিয়ে প্রায় দুই হাজার বর্গফুটের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি দেখতে পান। বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। বাড়ির চারদিকে আরসিসি পিলার ও ভিম দিয়ে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ১৫ শতাংশ জমির ওপর বাড়িটি নির্মাণে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে বলে প্রমাণ পায় দুদক টিম। এছাড়া তার নিজের নামে ৩৫ শতাংশ জমি, স্ত্রী আকলিমা খাতুনের নামে ৬ শতাংশ এবং তার ওপর নির্ভরশীল অন্যদের নামে আরও কিছু সম্পদ ক্রয় করার তথ্য মিলেছে।
অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য ও সংগৃহীত নথিপত্র পর্যালোচনায় পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে এনফোর্সমেন্ট টিম। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দুদকের ফরিদপুর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আর দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ লোপাট ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়া সম্পদ বিবরণী জারির সুপারিশসহ কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারির অনুমোদন দেয় কমিশন।
আরএম/এসএম