৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার
পুরুষ কোটায় নারী নিয়োগের সুপারিশ!
* ভুলে ভরা ফল পরিবর্তন চায় চার শতাধিক প্রার্থী
* পিএসসিতে ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন প্রার্থীদের
বিভিন্ন জটিলতায় তিন বছর আটকে থাকার পর সম্প্রতি ৪০তম বিসিএস থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য নন ক্যাডার পদে তিন হাজার ৬৫৭ প্রার্থীকে নিয়োগে সুপারিশ করা হয়েছে। এই নিয়োগের সুপারিশে ব্যাপক ভুলের অভিযোগ করেছেন প্রায় চার শতাধিক প্রার্থী। তাদের অভিযোগ নারী কোটায় পুরুষ আর পুরুষ কোটায় নারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা না থাকার পরও নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া ফলাফল প্রকাশে কারিগরি ও পদ্ধতিগত ব্যাপক ত্রুটি, কোড না থাকার কারণে সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেক প্রার্থী। পছন্দক্রমে ব্যাপক ভুলভ্রান্তি, নির্দিষ্ট পদে আবেদন করার পরও ভিন্ন পদে নিয়োগ সুপারিশ ও পছন্দক্রম শূন্য দেখানোসহ নানা জটিলতাও রয়েছে। এসব বিষয়ে ধরা পড়ার পর সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) একদফা সংশোধনের পর ফের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
এদিকে পিএসসি বলছে, ৪০তম বিসিএসে যারা ক্যাডার পদ পাননি, তাদের পছন্দক্রমের ভিত্তিতে নন-ক্যাডারে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। তিন বছর ধরে অনলাইনে সফটওয়্যার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন ছাড়াও ম্যানুয়ালি একজন পিএসসি সদস্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে প্রতিটি আবেদন পুনরায় যাচাই করা হয়। এতে ভুল থাকার সম্ভাবনা খুব কম।
বিজ্ঞাপন
অপরদিকে অভিযোগ করা প্রার্থীরা বলছেন, ৪০তম বিসিএস নন ক্যাডার পদে চূড়ান্ত সুপারিশের পর ভুল ধরা পড়েছে। এছাড়া কিছু বিষয়ে আবেদনের সুযোগ দিলেও কোড না থাকার কারণে সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেক প্রার্থী। এছাড়াও পছন্দক্রমে ব্যাপক ভুলভ্রান্তি—নির্দিষ্ট পদে আবেদন করার পর ভিন্ন পদে নিয়োগ সুপারিশ ও পছন্দক্রম শূন্য দেখানোসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এসব ত্রুটি উল্লেখ করে পিএসসিতে ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন জানিয়েছেন চার শতাধিক প্রার্থী।
১১তম গ্রেডে ডেপুটি জেলার পদে নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন এমন একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, আবেদনে শুধু নবম গ্রেড ও টেকনিক্যাল পদগুলো পছন্দক্রমে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমাকে যে পদে সুপারিশ করা হয়েছে, সেই পদের জন্য আমার কাঙ্ক্ষিত উচ্চতাই নেই। ফলে সুপারিশপ্রাপ্তির পরও চাকরি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
নন-ক্যাডার পদে আবেদন করা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, অনলাইনে আবেদনের সময় পছন্দক্রমে শুধু নবম গ্রেড রাখা হয়েছিল। ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, ১২তম গ্রেডে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া আবেদনের কপিতেও পছন্দক্রম—নবম গ্রেডের পরিবর্তে ১১ থেকে ১৩তম গ্রেড হয়ে গেছে!
নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্ত রায়হান কবির বলেন, ‘আমি নবম গ্রেড ছাড়া কোনো পছন্দক্রম দেইনি। কিন্তু আমাকে ১১তম গ্রেডে ডেপুটি জেলারের পদে সুপারিশ করা হয়েছে।’
অভিযোগ রয়েছে, পছন্দক্রমের শুরুতে প্রার্থীরা ইংরেজি, গণিত, কম্পিউটার, রসায়নসহ জেনারেল পদের পর টেকনিক্যাল পদগুলো রেখেছিলেন। তবে প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, এসব পদ ফাঁকা রেখেই নিচের গ্রেডের টেকনিক্যাল পদগুলোতে তাদের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে পিএসসি বলছে, এসব পদে সুপারিশ করার মতো যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘৪০তম বিসিএস নন ক্যাডার পদে অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সুপারিশপ্রাপ্তির পর অনেক প্রার্থীই এভাবে অভিযোগ করে থাকেন। অভিযোগগুলো যাচাই করে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করা হচ্ছে। এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা একেবারে শূন্যের কোঠায়। সফটওয়্যারের পাশাপাশি ম্যানুয়ালি একজন পিএসসি সদস্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে প্রতিটি আবেদন পুনরায় যাচাই করে থাকি।’
এনএম/এমএসএ