দেশের কয়েকটি স্থানে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল অথবা দুষ্কৃতিকারী বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা তৈরি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করেছিল। অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে তাদেরকে শনাক্ত করে তাদের অপচেষ্টা নস্যাৎ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলিট ফোর্স র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা এখনো চলমান রয়েছে। সেসব ব্যক্তি, দুষ্কৃতিকারী যারা স্বার্থান্বেষী মহলের মাধ্যমে এ অপচেষ্টা করেছিল তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ধরনের নাশকতা বা জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কোনো তথ্য নেই। তবে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। আমরা নিয়মিত গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল অব্যাহত রেখেছি।

সোমবার (২২ অক্টোবর) সকালে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী র‍্যাব ফোর্সেসের নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন তিনি।

রাজধানীর গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে কমান্ডার মঈন সাংবাদিকদের বলেন, এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল আছে যারা গুজব ছড়িয়ে পেনিক সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। এর আগে দেখা গেছে যে, তারা গুজব ছড়িয়ে নাশকতার চেষ্টা করেছে। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে, তাদের র‍্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে।  

কমান্ডার মঈন বলেন, গত ২০ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে। শারদীয় এই দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে গত ১৬ অক্টোবর থেকে র‍্যাব সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে স্লোগান, ধর্ম যার যার উৎসব সবার, এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে শারদীয় দুর্গাপূজা যেন নিরাপদে উদযাপন করতে পারি সেজন্য আমরা দেশব্যাপী বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সারাদেশে ৩২৪০৭টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। এসব মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চার হাজারের বেশি সদস্য সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে কাজ করছে। তিন শতাধিক টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। যাতে করে আমাদের এই উৎসবকে কোনো দুষ্কৃতিকারী বা স্বার্থান্বেষী মহল বানচাল করতে না পারে।

তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করেছি। নিয়মিত তল্লাশি করা হচ্ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের গোয়েন্দা সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন, তথ্য সংগ্রহ করছেন। বিভিন্ন পূজামণ্ডপে সুইপিং করা হচ্ছে। সারাদেশে যেখানে প্রয়োজন সেখানে সুইপিং করা হচ্ছে। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য র‍্যাবের স্পেশাল ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডগস্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হচ্ছে। র‍্যাবের হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবার সার্বিক সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।  

আমাদের প্রতিটি এলাকায় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে যেসব পূজামণ্ডপ রয়েছে, সেখানকার পূজা কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে যা যা করা প্রয়োজন তা করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইউনিট প্রধানরা নিয়মিত পূজামণ্ডপগুলো পরিদর্শন করছেন। র‍্যাব সদর দপ্তর থেকে আমরা সমন্বয় করে সারাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

দেশের কয়েকটি স্থানে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল অথবা দুষ্কৃতিকারী বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা তৈরি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করেছিল উল্লেখ করে কমান্ডার মঈন বলেন, সেসব দুষ্কৃতিকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল গুজবের মাধ্যমে পেনিক সৃষ্টির চেষ্টা করে। এই ধরনের গুজব যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে র‍্যাব সাইবার সেল কাজ করছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছি। 

পূজা কমিটিকে ধন্যবাদ দিয়ে কমান্ডার মইন বলেন, পূজার বিরতিকালে দেখেছি স্বার্থান্বেষী বা সুযোগসন্ধানী মহল বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা বা অপচেষ্টা করে। পূজা কমিটিকে ধন্যবাদ, পূজার বিরতিকালে বা মধ্যরাতে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করছেন। আমরা সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। 

যেসব নারী পূজামণ্ডপে আসছেন, তারা যেন কোনোভাবে হেনস্তা বা ইভটিজিংয়ের শিকার না হন সেজন্য র‍্যাব গোয়েন্দা সদস্যরা সাদা পোশাকে কাজ করছে। বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। এব্যাপারে গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করছে।

পূজা উদযাপন কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে একটা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেটা মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি। 

তিনি বলেন, আগামীকাল প্রতিমা বিসর্জন। র‍্যাবের পক্ষ থেকে বিসর্জনে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

জেইউ/জেডএস