নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সিইসির মতের বিরোধিতা অন্য কমিশনারদের
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করতে তোড়জোড় শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। আর ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণ হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যম সম্পাদকদের কাছে নেতিবাচক ধারণাপত্র পাঠিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে সিইসির নেতিবাচক ধারণা পত্রের বিরুদ্ধে মতামত জানিয়েছেন ইসির একাধিক কমিশনার।
অন্য কমিশনাররা বলছেন, সিইসির ধারণাপত্রের ওই মূল্যায়ন একান্তই ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে ইসির কোনো সম্পর্ক নেই। অন্য কমিশনাররা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং তারা সিইসির মূল্যায়নের সঙ্গে একমতও নন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে, রোববার (২২ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ধারণাপত্রটি সিইসি নিজেই লিখেছেন এবং এতে তার ব্যক্তিগত মত প্রতিফলিত হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে আমার কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। অথচ আমি ইসির একজন সদস্য। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরেরও মতামত নেওয়া হয়নি। কমিশনে এটি নিয়ে আলোচনাও হয়নি। আমরা গণমাধ্যম থেকে বিষয়টি জেনেছি। ওই ধারণাপত্রে যা বলা হয়েছে, তা সিইসির ব্যক্তিগত মতামত... এটা ইসির বক্তব্য নয়।’
বিষয়টি নিয়ে আজ (মঙ্গলবার) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমার মতে ভোটের পরিবেশ ভালো আছে। আমি কোনো সমস্যা দেখছি না। মানুষ জানতে চায় কবে ভোট হবে। বিগত যেসব ভোট করলাম কোথাও কোনো মারামারি ছিল না। সিইসি যে ধারণাপত্র দিয়েছেন তা আমি দেখিনি। এটা আপনাদের পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।’
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘আগের যে সংলাপ ছিল সেই ধারণাপত্র দেখেছি। কিন্তু সদ্য পত্রিকায় প্রকাশিত ধারণাপত্র দেখিনি। সিইসি সম্পাদকদের দিয়ে যা ছাপিয়েছে সেটিও দেখিনি। এটা যেহেতু দেখিনি সুতরাং জানি না। এই ব্যাপারে কোনো মিটিং হয়নি। মিটিং হলে তো আমি জানতাম। আমি তো ভোটের কোনো খারাপ পরিবেশ দেখছি না। আমরা অনেক ভোট করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘পত্রিকায় দেখেছি কমিশনার ধারণাপত্রে উল্লেখ করেছেন... চারজন নির্বাচন কমিশনার কিছু জানে না। চারজন কমিশনার কি জানে না সেটি আমিও জানি না। তবে এই বিষয়ে আমি কোনো অফিসিয়াল কমেন্ট দেব না। এই বিষয়ে ইসি সচিব কথা বলবেন।’
গত ১৮ অক্টোবর গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালক মো. শরিফুল আলমের সই করা একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে আগামী ২৬ অক্টোবর নির্বাচন ভবনে ‘গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক কর্মশালায় অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করতে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ওই চিঠির সঙ্গে কর্মশালায় আলোচনার জন্য দুই পৃষ্ঠার যে ধারণাপত্র পাঠানো হয়, তাতে বর্তমান নির্বাচন পরিস্থিতি, ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব, সীমাবদ্ধতা ও গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখ করা হয়।
ধারণাপত্রে যা লেখা ছিল
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের কাছে পাঠানো আলোচিত ধারণাপত্রে বলা হয়, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেটি এনো হয়ে ওঠেনি। প্রত্যাশিত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মতভেদ নিরসন হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম দলগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়। রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
কিন্তু তাতে প্রত্যাশিত মীমাংসা বা সংকটের নিরসন হচ্ছে বলে কমিশন মনে করে না। বিষয়টি রাজনৈতিক। এক্ষেত্রে ইসির করণীয় কিছু নেই। নির্বাচনের বিষয়ে দেশে পর্যাপ্ত আইন আছে। তবে আইন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমান্তরাল মিথস্ক্রিয়া না হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আইনের বাস্তবায়ন সহজসাধ্য হয় না।
আরও বলা হয়, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ, মতানৈক্য ও সংকট হতেই পারে। পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা অন্বেষণ করা হলে তা অধিকতর ফলদায়ক হতে পারে। পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক সহনশীলতা এবং সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য নিয়ামক। ইসি গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করে না, নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। তবে নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ ও বাহন। নির্বাচন আয়োজনে যদি সংকট চলমান থাকে তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
এসআর/কেএ