হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া আসামিকে গ্রেপ্তার
ক্ষমতা দেখাল হাটহাজারী থানা পুলিশ!
হাইকোর্ট থেকে জামিনপ্রাপ্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা পুলিশ। যদিও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম খাইরুল আলম চৌধুরী। তিনি হাটহাজারী উপজেলার ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড ফতেয়াবাদ নুরুল হক মেম্বারের বাড়ির বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত আবদুল হক।
গতকাল রোববার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হাটহাজারী থানার চৌধুরীহাট সড়কের পাশ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনার পর তাকে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় হাজতে রাখে পুলিশ। পরে বিষয়টি নিয়ে রাত ১০টা ৩৭ মিনিটের দিকে এ প্রতিবেদক হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন দেন। ওই সময় ওসি হাইকোর্টের জামিনে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে আসামিকে ছেড়ে দিয়েছেন বলে প্রতিবেদককে জানান। কিন্তু তখনও আসামিকে ছেড়ে দেয়নি পুলিশ। এর পাঁচ মিনিট পর আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতারণা, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও হুমকি প্রদানের অভিযোগে আদালতে দায়ের হওয়া একটি মামলায় খাইরুল আলম চৌধুরী এবং তার দুই ভাই দিদারুল আলম ও সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর ভুক্তভোগীরা উচ্চ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেন। ১৯ অক্টোবর বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও এ কে এম জহিরুল হকের দ্বৈত বেঞ্চ তিন ভাইকে অন্তর্বর্তীকালীন ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। এ সময়ের মধ্যে তাদের চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, উচ্চ আদালতের ওই আদেশের কপি এসে পৌঁছায় নিম্ন আদালতে। একই সঙ্গে জামিনপ্রাপ্তরা গত ২৪ অক্টোবর আইনজীবীর সই করা সনদ হাটহাজারী থানায় জমা দেন। হাটহাজারী থানায় কর্মরত এক পুলিশ সদস্য সেটি রিসিভ করে সই ও সিলমোহর মেরে দেন।
কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় হঠাৎ হাটহাজারী থানায় কর্মরত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মুবিন নামের এক কর্মকর্তা জামিনপ্রাপ্ত আসামি খাইরুল আলমকে গ্রেপ্তার করেন। যদিও ওই সময় জামিনে থাকার বিষয়টি পরোয়ানা তামিল করা মুবিনকে অবহিত করা হয়। তবে, তিনি কর্ণপাত না করে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে খাইরুলকে নিয়ে থানা হাজতে ঢুকিয়ে দেন।
আরও পড়ুন
গ্রেপ্তার হওয়া খাইরুলের ভাইপো মো. ওমর ফারুক ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, জামিন নেওয়ার কাগজ ২৪ অক্টোবর আমরা থানায় জমা দিয়েছি। তারা সিল ও সই দিয়ে সেই কাগজ রিসিভ করেছেন। আজ (রোববার) সন্ধ্যায় হঠাৎ আমার চাচাকে গ্রেপ্তার করেন এএসআই মুবিন। তাকে আমি হোয়াটসঅ্যাপে সব কাগজপত্র পাঠিয়েছি। এরপরও তিনি বলেন, ‘এটি তো থানায় রিসিভ হয়নি। সই মিল নেই।’ তিনি চাচাকে থানায় নিয়ে যান। একপর্যায়ে আমি তাকে বলি, মিল না থাকলে আপনি কোর্টে পাঠিয়ে দেন। তারা বারবার বলেন, পরিবার থেকে কাউকে এসে জিম্মায় নিতে হবে। কিন্তু ওনার পরিবারে তেমন কেউ নেই। ছোট ছোট বাচ্চারা রয়েছে। এ কারণে কেউ যেতে পারেননি। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম দিদার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে হাটহাজারী থানা পুলিশ বেআইনি কাজ করেছে। তাকে এক মিনিট হাজতে রাখাও উচিত হয়নি। পুলিশ দাবি করছে তারা জানেন না। অথচ গত ২৪ অক্টোবর তাদের আইনজীবী সনদ দেওয়া হয়েছে। তারা সেটি রিসিভও করেছেন। এ ছাড়া হাইকোর্টের জামিনের ওই আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। যে কেউ চাইলে যাচাই করতে পারেন।
অভিযোগে বিষয়ে জানতে আসামিকে গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা এএসআই মুবিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন
হাটহাজারী থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতের পরোয়ানামূলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার কাগজপত্র দেখানোর পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগেও উচ্চ আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্তদের বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার নিয়ে নানা সময় আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কোনো কোনো ঘটনা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। উচ্চ আদালত অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের ভর্ৎসনাসহ নানা শাস্তি দিয়েছেন। তারপরও নিজেদের শুধরে নেননি এ অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা!
এমআর/এমএআর