অক্সিজেন সিলিন্ডার না আনলে বিপদে পড়তাম
শ্বাসকষ্ট্ নিয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন এক রোগী/ ছবি: ঢাকা পোস্ট
প্রতিমা দেবীর বয়স ৬৫ বছর। জ্বর, সর্দি ও শরীর ব্যথা হওয়ায় পাঁচদিন আগে করোনা পরীক্ষা করালে ফলাফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু এখনও কমছে না জ্বর, আছে সর্দিও। পাশাপাশি নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। দিন দিন অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন ছেলে।
রোগীর সঙ্গে এনেছেন অক্সিজেন সিলিন্ডারও। বেশিরভাগ হাসপাতালেই এখন অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব। শ্বাসকষ্ট হয়ে অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারাও যাচ্ছেন। তাই প্রস্তুতি হিসেবে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এসেছেন বলে জানালেন প্রতিমা দেবীর ছেলে।
বিজ্ঞাপন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিমার ছেলে জানান, রাজধানীর বনশ্রীতে থাকেন তারা। জ্বর, সর্দি ও কাশি হওয়ায় পাঁচদিন আগে বাবা-মা দুজনেরই করোনা পরীক্ষা করান। ফলাফলে বাবার আসে পজিটিভ ও মায়ের নেগেটিভ আসে। কিন্তু মা-ই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গত তিনদিন ধরে জ্বর, মাথাব্যথা, হালকা কাশি আছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। মাকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই শুনছি। এজন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনেছি। মিডিয়ায় যা শুনছি তাই সঠিক হলো। যদি অক্সিজেন সিলিন্ডার না আনতাম কী বিপদেই না পড়তাম।
সোমবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, করোনায় আক্রান্ত অনেক রোগী আসছেন। তাদের অনেকেরই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। যাদের অবস্থা একটু ভালো তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় আইসোলেশনে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল। আর যাদের অবস্থা জটিল তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে- এমন বেড খালি নেই।
বিজ্ঞাপন
জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক জানান, বেশিরভাগ রোগী আসছেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। কিন্তু অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে এমন বেড একটাও খালি নেই। তারপরও আমরা রোগী ভর্তি নিচ্ছি। যখন বেড খালি হচ্ছে তখন সাধারণ বেড থেকে সেখানে পাঠানো হচ্ছে।
জানতে চাইলে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার নাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগীর চাপ বেশি। অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে আমাদের এমন বেডের সংখ্যা ৩০০টি। গতকাল (রোববার) পর্যন্ত ২৯৫টিতে রোগী ভর্তি ছিল। আজ আরও রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়া ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড আছে ২৯টি, এর একটিও খালি নেই।
করোনার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না। গতবারের তুলনায় এবার রোগের তীব্রতা বেশি। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণের হার কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহেও ১০০ জন রোগীর টেস্ট করালে এখানে ৫০ জন পজিটিভ আসত। গত দুই-তিন দিনে এটা কমেছে, ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। এটা ভালো দিক। এভাবে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে চাপ কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে, তা না হলে পরিস্থিতি কঠিন হবে।
এদিকে দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে সোমবার (১২ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১৪ এপ্রিল থেকে সাতদিন দেশের সব অফিস-আদালত, শপিংমল, দোকানপাট, হাটবাজার বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সব ধরনের পরিবহন চলাচলও। এ সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে পোশাক কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখা যাবে।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা দেশে ভাইরাসটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এই নিয়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮২২ জনে। একই সময়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ২০১ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৭ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫২৩ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৮১ হাজার ১১৩ জন।
এসআই/এসএসএইচ