সমর্থন পার্সেন্টেজ কম দেখিয়ে মনোনয়ন বাতিলের অভিযোগ নারী প্রার্থীর
আমি যথাসময়ের মধ্যে সব কাগজ জমা দিয়েছি। কিন্তু জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এক পার্সেন্ট ভোটারের সমর্থন কম দেখিয়ে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। এটা হয়রানিমূলক। আমি যাতে নির্বাচন করতে না পারি বা রাজি না হই সেজন্য এমন করা হয়েছে।
নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে এসে এসব কথা বলেন অধ্যক্ষ তাহমিনা আখতার মোল্লা। তিনি ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আজ সেই ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় এসেছি। আমাকে আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল করতে বলা হচ্ছে। আমি গ্রামের মানুষ, আমি এখন আইনজীবী কই খুঁজব। স্বল্প সময়ে আইনজীবী পেলেও তো দুই-এক লাখ টাকা লাগবে। আমাকে কেন সেই টাকা খরচ করতে হবে। আমার কাগজপত্র ঠিক থাকলে তো দেখে বৈধতা দিলেই হয়।
তাহমিনা আখতার জানান, ঠাকুরগাঁও-১ সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আপিল করতে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এসেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, এক পার্সেন্ট ভোটারের সমর্থনকে আমি কিছুই মনে করি না। আমি তো প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোটের প্রার্থী রমেশচন্দ্র সেনের বিরুদ্ধে ভোট করে ১ লাখ ৯২ হাজার মানুষের জনসমর্থনে জিতেছিলাম। পরে তার দ্বন্দ্বের বলি হয়েছি উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে।
স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বলেন, এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। কিন্তু আমার মনোনয়ন বাতিল করা ইনটেনশনাল, হয়রানিমূলক। আমার জনপ্রিয়তাকে ভয় পাচ্ছে। দলের নেত্রীর তো এত সময় নাই আমার খোঁজ রাখার। আমি সেই সুদূর ঠাকুরগাঁও থেকে এখানে এসেছি। এখানেও আপিল কার্যক্রম হয়রানিমূলক।
তিনি বলেন, আমি যখন ঘোষণা দিয়েছি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি, মানুষের মধ্যে উল্লাস-আনন্দ শুরু হয়েছিল। মনোনয়ন বাতিল করার পর সেই উল্লাস ভাটা পড়েছে, মানুষ চুপ হয়ে গেছে। আমি ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের জন্যই আপিল করতে এসেছি। আমার টাকা, বাড়ি-ঘর নেই। এর আগে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষই আমাকে সব দিয়ে জিতিয়েছে।
তাহমিনা আখতার বলেন, এখানে এসে শুনছি সাত সেট কাগজপত্র জমা দিতে হবে। ইংরেজিতে আবেদন করতে হবে। বাতিল হওয়া অর্ডার জমা দিতে হবে। আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আমি মূর্খ মানুষ, ইংরেজি পারি না। আমাকে কেন ইংরেজিতে আবেদন করতে হবে। আমি ইংরেজি পারি না, এটা তো প্রার্থী হতে বাধা হতে পারে না। এতে কি যোগ্যতা কম হয়ে যায়? আমি তো বাংলাতেই সব বোঝাতে পারি।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, আমি কি এখানে কাউকে চিনি? আমি কি এখানকার উকিল চিনি? আর উকিল ধরতে গেলেও তো টাকা লাগবে। কমপক্ষে ১ লাখ টাকা গুনতে হবে। আমার তো সময় নষ্ট হচ্ছে। আর আমার এত টাকাও নেই।
এসব নির্বাচন কমিশনের ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নাকি চায় জনসমর্থন ও উৎসবমুখর নির্বাচন। তারা আমার সব কাগজপত্র দেখুক, বৈধতা দিক। আমি মানুষের কাছে চলে যাই, ভোটারের কাছে থাকি। কিন্তু আমার মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রচার করছে, আমি নাকি বসে গেছি।
স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বলেন, এখন কিছুই করার নেই। জনগণের জন্য, ঠাকুরগাঁয়ের মানুষের জন্য হলেও আমাকে টাকা খরচ করতে হবে, আইনজীবী ধরতে হবে। চেয়েছিলাম আমি সাদামাটা মানুষ, কাগজপত্র দেখে আমাকে বৈধতা দিয়ে দিক। আমার জনসমর্থনের কোনো সমস্যা নেই। কারণ আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার প্রয়োজন ৪৮০৬ জন ভোটারের সমর্থন স্বাক্ষর। আমি তো জমা দিয়েছি পাঁচ হাজারের বেশি স্বাক্ষর। কম দেখিয়ে মনোনয়ন বাতিল করা হয়রানিমূলক।
জেইউ/আরএইচটি/এসএসএইচ