মোট আয়তনের ২৫% সড়ক থাকার কথা, ঢাকায় আছে ৮%
শহরের বাসিন্দাদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়কের প্রয়োজন হলেও রাজধানী ঢাকায় মাত্র ৮ শতাংশ সড়ক আছে। এমনকি এরমধ্যে আবার ৫২ শতাংশই মোটরযান চলাচলের অনুপযোগী। যার ফলে রাজধানী ঢাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে যানজট।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কসহ পরিবেশ সংগঠনগুলোর যৌথ আয়োজনে “স্থায়িত্বশীল নগরায়ন: সমস্যা ও সমাধান” শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখেন বাপার সহ-সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শহর বা নগরাঞ্চলে বসবাস করছে এবং নগরবাসীর প্রায় ৩২ শতাংশই ঢাকায় বাস করে। রাজধানী ঢাকার ক্ষেত্রে সমগ্র রাজউক এলাকায় বর্তমান জনসংখ্যা ২৬ মিলিয়ন এবং জনশুমারি ২০২২ অনুযায়ী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিদ্যমান জনসংখ্যা প্রায় ১০.২৮ মিলিয়ন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, দেশে নগরায়ন সংকটের সম্মুখীন। শহরভিত্তিক উন্নয়ন ধারায় সারা দেশব্যাপী মানুষের শহর অভিমুখীতার ফলে দেশের শহরাঞ্চলগুলোর (বিশেষত রাজধানী ঢাকা) জনসংখ্যা অতিদ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ধিত এই জনসংখ্যার ভারবহনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অপ্রতুল সড়ক ব্যবস্থার কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে পরিবহন খাত।
নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাজধানী ঢাকা থেকে এবং দেশের প্রায় অর্ধেক কর্মসংস্থানের কেন্দ্র হচ্ছে ঢাকা। তবে বিদ্যুৎ, পানি, পয়নিষ্কাশন, সড়ক, পরিবহন, বাসস্থানসহ নগরবাসীর বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এছাড়াও দেশব্যাপী ক্রমাগত দখল এবং দূষণে শহরগুলোর সবুজ ও জলজ অংশসমূহ বিলীন হয়ে পড়ছে।
সম্মেলনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের নগরায়ণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গ্রাম হতে লোক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় কৃষি উৎপাদন ব্যতীত অন্য পেশা গ্রহণের সীমিত সুযোগ ও গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য-বস্ত্র, শিক্ষা-চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা এবং পাশাপাশি জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রভাবের কারণে মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে নগর গবেষণা কেন্দ্রের (সিইউএস) চেয়ারম্যান বিশিষ্ট নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এরপর সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
এসময় অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, অতি নগরায়নের ফলে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নগরায়নের ঝুঁকি বাড়ছে। সমন্ময়হীনতার কারণে দ্রুত নগরায়ন সম্প্রসারিত হচ্ছে। আবাসন কোম্পানিগুলোর চটকদার বিজ্ঞপ্তির ফলে দেশের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ঢাকায় যেমন অপরিকল্পিত নগরায়ন হয়ে গিয়েছে, বর্তমানে গ্রামগুলোও একইভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ন এর দিকে যাচ্ছে। তাই এখনই সময় গ্রামগুলোকে পরিবেশ বান্ধব নগরায়নের জন্য পরিকল্পনা করা। স্থায়ীত্বশীল নগরায়নের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নগরের সুবিধাগুলো শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক না করে ভৌগোলিক সমতা বজায় রেখে প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
সম্মেলনে বিভিন্ন অধিবেশনে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপনা ও আলোচনায় করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, বুয়েটের অধ্যাপক ড. আফসানা হক, বেলার প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ আরও অনেকে। সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে মোট ১৬টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়েছে।
টিআই/এমএসএ