ওএইচসিএইচআরের বিবৃতির প্রতিবাদ সরকারের
সদ্য অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের (ওএইচসিএইচআর) দেওয়া বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ওএইচসিএইচআর বিবৃতি ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে এবং মানবাধিকার নিয়ে রাজনীতিকরণ ও পক্ষপাত করেছে।
গত ৮ জানুয়ারি নির্বাচন ইস্যুতে ওএইচসিএইচআরের দেওয়া বিবৃতি নিয়ে রোববার (১৪ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ প্রতিবাদ জানায়।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিষয়ে সম্প্রতি ওএইচসিএইচআরের যে বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, সেটি সরকারের নজরে এসেছে। ওএইচসিএইচআর দুর্ভাগ্যবশত তাদের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। বিবৃতিতে বাস্তবকে ভুলভাবে উপস্থাপন করার পাশাপাশি মানবাধিকার নিয়ে রাজনীতিকরণ ও পক্ষপাতমূলক মূল্যায়নের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার সঠিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, গণতান্ত্রিক নীতি সমুন্নত রাখার জন্য সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত ৭ জানুয়ারি জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়। কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচনের দিন শান্তিপূর্ণ ছিল, যেটা অনেক আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা তুলে ধরেছেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
বিবৃতিতে বিএনপির সমালোচনা করে বলা হয়েছে, সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তবে দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানের অসাংবিধানিক দাবির অজুহাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করতে সহিংসতা ও নিরপরাধ মানুষ হত্যার আশ্রয় নিয়েছিল। যেমনটি দলটি জাতীয় নির্বাচনের আগে করেছিল। শুধু গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি কর্মীরা নিরীহ নাগরিক ও কর্তব্যরত আইন প্রয়োগকারী কর্মীসহ ২৪ জনকে হত্যা করেছে।
তারা সরকারি-বেসরকারি প্রায় এক হাজার যানবাহনে আগুন দেয়, লাইনচ্যুত করে এবং ট্রেনে হামলা চালিয়ে মা ও তার তিন বছরের শিশুসহ যাত্রীদের জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়। এ প্রেক্ষাপটে দেশকে অস্থিতিশীল এবং এর গণতান্ত্রিক যাত্রাকে ব্যাহত করার লক্ষ্যে হুমকি, বাধা ও সহিংসতার মধ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। এত সহিংসতার পরও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সংযত, যৌক্তিক ও আইনি সীমার মধ্যে ছিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বিচারে গণগ্রেপ্তার, হুমকি, জোরপূর্বক গুম, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা ব্ল্যাকমেইলিং সংক্রান্ত যে অভিযোগ ওএইচসিএইচআরের, তা ভিত্তিহীন। গ্রেপ্তারের সংখ্যা নিছক অতিরঞ্জন। যারা সহিংসতা ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত বা উসকানি দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনের শাসন বজায় রাখতে ও সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষার জন্য এ ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় ছিল।
বাংলাদেশ সরকার বলতে চায়, পাবলিক স্টেটমেন্টে তথ্য ব্যবহারের আগে অফিস থেকে সত্যতা যাচাই করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সংবিধানের চেতনা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও ম্যান্ডেট দ্বারা পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায় এবং যেকোনো বৈধ উদ্বেগের বিষয় সমাধান করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ ও এর মানবাধিকার ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য উন্মুখ।
এনআই/এসএসএইচ