মহামারিতে আন্তর্জাতিক সাফল্য এনেছেন ২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
করোনা মহামারিতে ‘পেনডামিং-২.০’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন দুই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।
প্রায় ৭৩টি দেশের ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ভার্চুয়ালি আয়োজিত ওই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় পাঁচ সদস্যের ‘হ্যানম’ নামের টিম। যে টিমে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ফারাবি এন এ রহমান ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সম্রাট। টিমের অপর তিন সদস্য ছিলেন আমেরিকা, চীন ও নিউজিল্যান্ডের শিক্ষার্থী।
বিজ্ঞাপন
ওয়াশিংটনভিত্তিক দ্য নেটওয়ার্ক অব স্কুলস অব পাবলিক পলিসি, অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএএসপিএএ) নামের অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ১৮ সদস্যের চারটি টিম নিয়ে ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। করোনা মহামারির এই উদ্ভূত সংকটে রাষ্ট্রের করণীয় কী, এমন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক জ্ঞান যাচাই ও শাণিত করতে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের মনোনীত শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় পুরস্কার (প্রাইজ পুল) বরাদ্দ ছিল প্রায় ১৫০০০ মার্কিন ডলার।
বিজ্ঞাপন
চ্যাম্পিয়ন দলের প্রতিযোগী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র ফারাবি এন এ রহমান এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিযোগিতায় রাষ্ট্রের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যা হলো- প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী এবং ডব্লিউএইচও রিপ্রেজেন্টেটিভ। ফাইনাল রাউন্ডে আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে পলিসি তৈরিতে ভূমিকা রাখি। এটি আমার জীবনের অন্যতম একটি অভিজ্ঞতা।
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমার বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মোবাশ্বের মোনেম স্যার ও সৈয়দা লাসনা কবির ম্যাম আমাকে মনোনীত করেন। উনাদের এই মোটিভেশন ও দিকনির্দেশনার কারণেই এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী হতে পারার অভিজ্ঞতাটা সত্যিই রোমাঞ্চকর ছিল। পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ছাত্র হিসেবে অনেক থিওরি আমাদের পড়তে হয়। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা আমাকে থিওরিগুলো প্রাক্টিক্যালি এপ্লাই করার সুযোগ দিয়েছে। সবশেষে আমি বলব এই প্রতিযোগিতা থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। কীভাবে নেটওয়ার্কিং এবং টিমওয়ার্ক এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হয় শিখেছি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোয়াজ্জেম হোসেন সম্রাট বলেন, প্রতিটি টিম তার সদস্যদের নিয়ে ৫ সদস্যের একটি কেবিনেট গঠন করে, যারা একটি কাল্পনিক রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং রাষ্ট্রটি সম্প্রতি একটি মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছে। যুগপৎ মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতি সচল রাখার কৌশল নিয়ে এই সিমুলেশন প্রতিযোগিতা। উদাহরণস্বরূপ- মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে কেবিনেট চাইলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘স্টে অ্যাট হোম অর্ডার’ জারি করে মানুষকে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অন্যদিকে, অনির্দিষ্ট কালের এই অর্ডার দেশের অর্থনীতিতে ধ্বস নামিয়ে মানুষকে ব্যাপক খাদ্য সংকট ও ভয়াবহ সামাজিক বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি করতে পারে। এই উভমুখী সংকট নিরসনে যে টিমটি সংক্রমণের হার কমিয়ে মহামারিজনিত মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ এবং একইসঙ্গে অর্থনীতিকে সচল রাখতে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছে, সেই টিমটি সবচেয়ে বেশি স্কোর করতে পেরেছে। প্রতিটি সিদ্ধান্তেই স্কোরিং হতে থাকে।
প্রতিযোগীরা জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭৩টি দেশের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে মনোনীত প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুটি রিজিওনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ৬ মার্চ প্রায় ৮০টি টিমের ৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে দুটি রিজিওনাল রাউন্ড প্রতিযোগিতা থেকে চারটি টিম ফাইনাল রাউন্ডের (গ্লোবাল অলস্টার রাউন্ড) জন্য কোয়ালিফাই করে। ১৬ এপ্রিল নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ১৮ সদস্যের চারটি টিম নিয়ে ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়।
আরএম/এসএসএইচ