প্রকল্পের নামে নদী ও পরিবেশকে ধ্বংস করছে সরকার
দেশের নদ-নদীতে বিভিন্ন ধরনের বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণের পুরোনো ধারণায় আটকে আছেন নীতি নির্ধারকরা। একদিকে বাংলাদেশ এখনো পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। অন্যদিকে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে দেশের নদী ও পরিবেশকে ধ্বংস করেই চলেছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিশ্ব ধরিত্রী দিবস-২০২১ উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কের (বেন) যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা : কোন পথে সরকার?’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের লকহ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, দেশের নদ-নদীর সংখ্যার কোনো সঠিক হিসাব সরকারের কাছে নেই। দেশে যে এতোগুলো পোল্ডার করা হলো, তাতে কি বন্যা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে? দেশে বিভিন্ন ধরনের বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণের পুরোনো ধারণা নীতি নির্ধারকদের মাথা থেকে এখনো যায়নি। পানি ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য বৃহৎ কর্মকাণ্ডে প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বা মামলা করার বিধান রাখা হয়নি। ফলে প্রকল্পগুলো বারবার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, তিস্তাসহ দেশের অন্য নদীগুলোকে কেন সরু করা হচ্ছে? চায়না পাওয়ার কোম্পানি কীভাবে নদী বিশেষজ্ঞ বনে গেল? দেশের সব মেগা প্রকল্পের বিষয়ে দেশের মানুষকে কেন জানানো হয় না বা কেন তাদের মতামত নেওয়া হয়নি? যেহেতু হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্তা বলে ঘোষণা করেছেন, সেহেতু কেন এবং কীভাবে জীবন্ত নদীর হাত পা কেটে পঙ্গু করা হচ্ছে? তাহলে হাইকোর্টের রায়কে কি প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে না?
বিজ্ঞাপন
বাপার সহ-সভাপতি ও বেনের প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে কোনো পরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে না। সব প্রকল্পই হচ্ছে কেবল অপরিকল্পিত ও লুটের প্রকল্প। মুষ্টিমেয় কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, আমলা ও টেকনোক্র্যাটদের কারণে দেশের সাধারণ জনগণের মতামত ও অধিকার উপেক্ষিত হচ্ছে বারবার।
বাপা সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, দেশের সম্পদ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ব্যবহার করা হচ্ছে জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করেই। কিন্তু এটি জনগণের সম্পদ এ সম্পদ ব্যবহারের আগে জনগণের মতামতের প্রয়োজন। সরকার দেশের নদী এবং পরিবেশকে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ধ্বংস করেই চলছে। সরকারের এ ধরনের প্রকল্পের মধ্যে সততা নেই বললেই চলে।
আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ, নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, সদস্য শারমীন মুরশিদ, তিস্তা রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম ফরিদ প্রমুখ।
এমএইচএন/এসকেডি/জেএস