জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন জীবন দিয়েছিল। তারপর কী হয়েছিল? টনক কী নড়েছিল? নড়েনি। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর একে পর এক অগ্নিদুর্ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে আমরা এখনো অন্ধকার যুগে বসবাস করছি।

শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেল ৪টায় বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাততলা ভবনের একটি মাত্র সিঁড়ি, আবার কোনো ফায়ার এক্সিট ছিল না। যেই একটি মাত্র সিঁড়ি ছিল সেখানে আবার গ্যাসের সিলিন্ডারে রাখা ছিল। এগুলো তো অত্যন্ত ভয়ংকর ব্যাপার। এরকম একটা অবস্থায় আপনি কীভাবে অগ্নিনির্বাপণ করবেন। এসব ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অবশ্যই দায় আছে। বিশেষ করে যেসব বাণিজ্যিক ভবনে এরকম অবস্থা, সেখানে ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব ছিল।

মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, এতগুলো মানুষ এখানে মারা গেছে, এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না। আমরা বারবার একই ঘটনা দেখতে পাচ্ছি, এরপর কিছুদিন উত্তপ্ত থাকে, তারপর আবার আগের মতো হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, গত বছর জুন মাসের ৪ তারিখে আমরা একটা জাতীয় সেমিনার করি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে। সেখানে আমরা নিমতলীর ঘটনা, চুড়িহাট্টার ঘটনা, বঙ্গবাজারের ঘটনা, নিউমার্কেটের ঘটনাসহ সব বড় বড় অগ্নিকাণ্ড পর্যালোচনা করি। সেখানে কী কী সমস্যা, আমরা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করি। কিন্তু সেসব সুপারিশের আজ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি এখানে রেস্টুরেন্টে পার্টি হচ্ছিল। কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ২০ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দিয়েছিল। যে কারণে মানুষের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু তারা আর প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারলেন না। আমাদের জাতীয়ভাবে দুর্ভাগ্য, আমরা কেউ এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সচেতন হচ্ছি না। আমাদের কর্তৃপক্ষকে এখন বাধ্য করতে হবে ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করতে।

উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এখানে অবশ্যই অসচেতনতা ছিল, অবহেলা ছিল। এত বড় একটি বাণিজ্যিক ভবন সেখানে ফায়ার এক্সিট থাকবে না? আর এটা না থাকার কারণে মানুষ পাগলের মতো ছোটাছুটি করেও বের হতে পারেনি।

কর্তৃপক্ষের অবহেলা নিয়ে তিনি বলেন, এখনো দেখেন পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন সরেনি। কাদের দায়িত্ব এটা সরানোর? ফায়ার সার্ভিস সরানোর জন্য একের পর এক নোটিশ করবে আর এগুলো সরবে না, এটা তো হতে পারে না।

এ মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলবেন কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এত কিছুর পরও যদি কর্তৃপক্ষের টনক না নড়ে, তাহলে তো আর কিছু বলার নেই।

উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, আসলে কি টনক নড়েছে? নিমতলীতে ১২৪ জন মরার পরে কি হয়েছে? কিছুই হয়নি। নিমতলীর পর তো চুড়িহাট্টার আগুনের ঘটনা। পরে বনানীর আগুনের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ৪৮ জন মারা গেছে। এভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে, গতকালও ৪৬ জন মারা গেছে। এই মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আমি শুনেছি।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এরকম ঘটনা ঘটতে থাকা মানে হলো আমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে বসবাস করছি। তাই এ অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের আলোর দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

জেইউ/এসএসএইচ