বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার যখনই স্কুলগুলো খোলার বিষয়ে চিন্তা শুরু করছিল, তখনই করোনাভাইরাসের নতুন ধাক্কা আসলো। আমরা ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করেই স্কুল না খুলে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এরমধ্যে যদি অবস্থা ভাল হয়, তাহলে স্কুল খোলা হবে, না হলে আমরা খুলবো না।

বিদ্যালয় না খোলা পর্যন্ত সরকারের অনলাইন শিক্ষা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি অন্য বই পড়া, শরীরচর্চা, খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক চর্চা চালিয়ে নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (জুম, ম্যাসেঞ্জার, ফেইসবুক গ্রুপ, ইউটিউব) ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লাস রেকর্ডিং করে কিশোর বাতায়ন, শিক্ষক বাতায়ন এবং ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কাজেই ঘরে বসে আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। আমি মনে করি, বিভিন্ন ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

অভিভাবকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা অভিভাবক বা বাবা-মা রয়েছেন তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো আপনারা বাচ্চাদের সময় দেবেন। কারণ, করোনাভাইরাস যেমন আমাদের কষ্ট দিচ্ছে তারপরেও হাজার কাজের চাপের মধ্যেও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন, এই সুযোগটার আপনারা সদ্ব্যবহার করবেন।’

এবার করোনাভাইরাসের কারণে বই উৎসব না হলেও বছরের শুরুতেই প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে নতুন বই দিচ্ছে সরকার। এ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২ পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ছাপা হয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি বই।

চলতি বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কয়েক দফা ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা এবং মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষাও না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের ভিত্তিতে দেয়া হবে এইচএসসির ফল। 

স্বাস্থ্যবিধি মেনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন কয়েকজন প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেন। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) থেকে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বই বিতরণ শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনদিন করে মোট ১২ দিনে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন বই বিতরণ করা হবে।

বই বিতরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সেখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার ৯৪ হাজার ২৭৫ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী) শিশুদের জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮টি বিশেষ ভাষায় বই বিতরণ করা হবে। তবে, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের ভাষায় শুধুমাত্র বাংলা বইটি পাবে। এবার ৯ হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হবে।

অন্যদিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার বইয়ের প্রচ্ছদে নতুনত্ব আনা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের ব্যাক পেইজে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন স্থিরচিত্র ক্যাপশনসহ সংযোজন করা হয়েছে। গত ২০১০ সাল থেকে এই দশ বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ বই সারাদেশে বিতরণ করা হয়েছে।

এমএইচএস