রাজধানীর বেদখল সব খাল উদ্ধার করা হবে: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর অনুষ্ঠান
রাজধানীতে বেদখল হওয়া সব খাল দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগে উদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটলে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরকে আধুনিক এবং দৃষ্টিনন্দন করতে হলে নগরীর বে-দখল এবং হারিয়ে যাওয়া খালগুলোকে উদ্ধার, সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। যে যে জায়গায় খাল দখল হয়েছে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নাগরিকের সব সুযোগ-সুবিধা দেশের জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি করপোরেশন ভালো করতে পারবে বলেই হস্তান্তর করা হলো। এসময় দুই সিটি মেয়রকে ড্রেনেজ ব্যবস্থপনা কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের পরামর্শ দেন।
বিজ্ঞাপন
তাজুল ইসলাম জানান, দুই সিটি করপোরেশনের মেয়ররা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। তাই জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অনুধাবন করে তাদের দুঃখ কষ্ট নিরসনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে দুই মেয়রকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
খাল দখল করে রাস্তা না বানিয়ে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট চালু করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নগরীর সব খাল সংস্কার করে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট চালু করা, দুই পাশে ওয়াকওয়ে ও সাইকেল লেন নির্মাণসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন ভিক্ষুকের জাতির কোনো মর্যাদা নেই, আর তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন ভিক্ষুকের জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী হননি। এজন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন এবং নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় বিশ্ববাসীর কাছে ইতোমধ্যে চমক সৃষ্টি হয়েছে এবং উন্নয়নের রোল মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করায় আজ ইতিহাস রচিত হলো। তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন বলেই আজ এ ইতিহাস রচনা হলো। নয়তো সম্ভব হতো না।
অনুষ্ঠানে তিন খাল ও দুই কালভার্টের বর্জ্য অপসারণে শনিবার থেকে ক্র্যাশ প্রোগাম শুরুর ঘোষণা দেন মেয়র তাপস। তিনি জানান, জিরানি, মান্ডা ও শ্যামপুর খাল এবং পান্থপথ ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টে দীর্ঘদিনের বর্জ্যের স্তুপ অপসারণে বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নেওয়া হয়েছে।
মেয়র বলেন, আগামী মার্চের মধ্যে এই তিন খাল ও দুই বক্স কালভার্ট হতে বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এই খাল তিনটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। আগামী মার্চের মধ্যে এই তিনটি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট যদি আমরা পরিষ্কার করতে পারি তাহলে জুন নাগাদ বাকিগুলো ধরব।
উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, রাজধানীর সব খাল পুনরুদ্ধার করে হারানো রূপ ফিরিয়ে আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে খাল উদ্ধার করা হবে।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান তার বক্তব্যে জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের জন্য অনেকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আলোর মুখ দেখেনি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বের কারণে আজ এটি সম্ভব হওয়ার মন্ত্রীর প্রশংসা করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারের বিভাগ, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসআর/এসএম