করোনা ৭৬ শতাংশ পরিবারের আয় কমিয়েছে
করোনা মহামারির প্রভাবে দেশের ৭৬ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে। কৃষি নির্ভর পরিবারগুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো বা কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে অকৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত অর্থাৎ শ্রমজীবী মানুষরা। কোভিড-১৯ এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে তাদের ওপর।
বাংলাদেশে ২০২০-এ করোনা চলাকালে সংসারের সেবাকাজের দ্রুত বিশ্লেষণ শীর্ষক এক অনলাইন জরিপে উঠে আসে এমন তথ্য। “ফরমাল রিকগনিশন অব দ্য উইমেনস আনকাউন্টেড ওয়ার্ক”-এর উদ্যোগে জরিপকাজ পরিচালনা করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ফোরামের নেতৃত্বে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শারমিন্দ নিলোর্মী।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৪ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএন উইমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সোকো ইশিকাওয়া।
করোনা মহামারির শুরুতে গত বছরের নভেম্বর মাসে জরিপের কাজ শুরু হয়ে জানুয়ারি পর্যন্ত চলে। দেশের ৯টা জেলায় শহরের ও গ্রামের বিভিন্ন পেশা ও বয়সের মানুষের মধ্যে জরিপটি চালানো হয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ নারী ও ১৩ শতাংশ পুরুষ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২১৯ জন গ্রামের এবং ২২৪ জন শহরের। উত্তরদাতাদের মধ্যে শতকরা ৪৭ শতাংশ গৃহিণী। বাকিরা অন্য পেশার।
বিজ্ঞাপন
জরিপ বলছে, শহর ও গ্রাম মিলিয়ে ৪৮.৪৯ শতাংশ পরিবার থেকে অন্তত এক জন কাজ হারিয়েছেন বা কাজ পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ নারীপ্রধান পরিবার অর্থনৈতিক অনটনে পড়েছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী উত্তরদাতাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশের বক্তব্য হলো- করোনা মহামারির সময়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আয়কারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৮ শতাংশের আয় কমেছে। অর্থাৎ এই মানুষগুলো দরিদ্র থেকে দরিদ্র হয়েছেন। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয়কারীদের ৭৩ শতাংশের আয়ও হ্রাস পেয়েছে। দেখা গেছে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো থাকলেও যারা অকৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত অর্থাৎ শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ।
নারীদের অনেকেই কাজ বা চাকরি হারিয়েছেন। পাশাপাশি বেড়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায় ঘরের কাজের চাপ। কাজে নিযুক্ত মানুষের মধ্যে শতকরা ৯১ দশমিক ৩ জন অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এদের শতকরা ৯৬ দশমিক ৭ জন নারী।
আশ্চর্যজনকভাবে শহরে নারীর কাজ ১২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এই মহামারির সময়ে। শতকরা ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী নারী অমূল্যায়িত গৃহস্থালি কাজে অনেকটা সময় দিয়েছেন এবং সেটা চার ঘণ্টারও বেশি সময়। এই সময়ে ঘরের কাজে পুরুষের অংশগ্রহণও বেড়েছে। উত্তরদাতাদের ৮২ দশমিক ৭৮ শতাংশ মনে করেন মহামারি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
আরএম/এনএফ