ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, দুটি সরকারি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রশ্নফাঁস ও পরীক্ষা কেন্দ্রে ডিজিটাল ডিভাইসে প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করা হতো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করা মামলায় তদন্তের একপর্যায়ে সংশ্লিষ্টতা পেয়ে চক্রের এই সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জনতা ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রকিবুল হাসান (২৫), অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মানিক কুমার প্রামাণিক (৩৮), রাশেদুজ্জামান সজীব (৩৬), হাছান মাহমুদ (২২), শফিকুল ইসলাম (৩০), রিপন কুমার (২৬) ও নাফিউল ইসলাম তাহসিন (১৮)। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে সিআইডি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এডিশনাল ডিআইজি কামরুল আহসান।

তিনি বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সময় তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার্থী নাফিউল ইসলাম তাহসিনকে মোবাইলসহ আটক করে। ওই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মামলা দায়ের করেন।

গ্রেফতারকৃত তাহসিনের নিকট থেকে উদ্ধারকৃত ডিভাইসের তথ্য পর্যালোচনা এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে গত ২২ ডিসেম্বর হাসান মাহমুদ ও রাশেদুজ্জামান সজিবকে রাজধানীর মালিবাগ মোড় থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অভিযোগের বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রাশেদুজ্জামান সজিব।

জিজ্ঞাসাবাদে সজিব জানায়, তিনি সাইফুরস কোচিং সেন্টারে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। এ চক্রে তার কাজ ছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ইংরেরি অংশের সমাধান করা। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রকিবুল হাসান শান্তের মাধ্যমেই তিনি এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন বলে দাবি করেন।

এদিকে রাশেদুজ্জামান সজিবের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রকিবুল হাসানকে গত রোববার মতিঝিলের দিলকুশা বক চত্বর মোড় থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ২০২০ সালে জনতা ব্যাংকের লিমিটেডের লোকাল অফিসে (দিলকুশা শাখায়) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন অভিযুক্ত রকিবুল। গ্রেফতারের পর আদালতে তিনিও রাশেদুজ্জামানকে দিয়ে প্রশ্ন সমাধানের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে রকিবুল হাসানের দেওয়া তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ায় অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মানিক কুমার প্রামাণিক, সহযোগী সাফিকুল ইসলাম ও রিপন কুমারকে রাজশাহীর মোহনপুর থানা এলাকা হতে গতকাল বুধবার রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত মানিক কুমার প্রামাণিক বর্তমানে রাজশাহীতে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

চক্রটি মুলত তিনটি পর্যায়ে কাজ করতো। প্রথম দল স্বচ্ছল পরিবারের চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করে হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলতো। অন্যদল পরীক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন পাঠিয়ে দিতো সেই গ্রুপে এক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রার্থীরাই সহযোগিতা করতো এবং তৃতীয় দল গ্রুপে পাওয়া প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করতো হলে থাকা প্রার্থীদের।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত মানিক কুমার প্রামাণিক জানিয়েছে- এই চক্রটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার অনেক আগে থেকেই ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ করত। তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা সংগ্রহ করত। পরীক্ষার সময়ে তারা সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে বাইরে বের করে ও সেই প্রশ্নপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করে আবার পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠাত।

অভিযুক্তদের নিকট থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও তদন্ত সাপেক্ষে এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি জালিয়াতির মাধ্যমে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং বিভিন্ন চাকরিতে যোগদান করেছে তাদের সকলকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।

সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আটককৃত প্রায় সবাই রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।


জেইউ/টিএম