পাঁচ বছর পরও ‘অজ্ঞাত’ থাকলো অফশোর ব্যাংকিংয়ের দুই হাজার কোটি টাকা
ইসলামী ব্যাংক ও দুদকের লোগো
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে জমা হওয়া ‘অজ্ঞাত’ দুই হাজার কোটি টাকার বিষয়ে গত পাঁচ বছর আগে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েও প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে এখনও রহস্য অজানা থেকে গেল।
বিজ্ঞাপন
সবশেষ চলতি সপ্তাহে আবারও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ থেকে ব্যাংকের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে (এফআইইউ) চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছে দুদক টিম।
অনুসন্ধান টিম প্রধান দুদকের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক সই করা চিঠিতে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখায় কয়েকটি এলসির বিষয়টি উল্লেখ করে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয় দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি অবগত নন বলে জানান।
২০১৫ সালে দুদক বিভিন্নভাবে অফশোর ব্যাংকি ইউনিটে জমাকরা এ টাকা হতে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের যে সব শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে তার রেকর্ডপত্র, বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাবে যে স্থানান্তর করা হয়েছে তার রেকর্ডপত্রের কপি, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল কর্তৃক ইসলামী ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকি ইউনিটে ওই টাকা জমার বিষয়ে যে তদন্ত করা হয় সেই তদন্ত প্রতিবেদনের কপি এবং ইসলামী ব্যাংকের ২০১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন ও ব্যালেন্স সিট ইত্যাদি সংগ্রহ করে বলে জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে (বিশেষ ধরনের ব্যাংকিং) ২ হাজার কোটি টাকার এক অজ্ঞাত তহবিল রয়েছে। অজানা উৎস থেকে এ তহবিলের টাকা ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিংয়ে জমা হয়েছে। ওখান থেকে ওই টাকার একটি অংশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে। সে সব শাখা থেকে ওই সব টাকার একটি অংশ বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনও এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, এ প্রক্রিয়াটি এমনভাবে করা হয়েছে যাকে মানি লন্ডারিংয়ের ভাষায় ‘লেয়ারিং’ বা জটিল লেনদেনের মাধ্যমে টাকার উৎস গোপন করার মতো অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
এ বিষয়ে প্রথমবার অনুসন্ধানের দায়িত্বে থাকা দুদক উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে অস্বীকার করেন।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের ২০১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনেও এ বিষয়ে এক ধরনের ধুম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনের কোথাও পরিষ্কারভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। মূল ইসলামী ব্যাংক থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে কোনো অর্থ বিনিয়োগ করা হয়নি। তারপরও অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে কীভাবে মূল প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা গেল-এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি তারা।
অথচ নিয়মানুযায়ী এক স্থানে ধার হলে অন্য স্থানে সম্পদ হিসাবে থাকতে হবে। সম্পদই যদি না থাকে তাহলে ধার দেওয়া হবে কোথায় থেকে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ওই ১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা কোথায় থেকে এসেছে। এর বাইরে ইসলামী ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটে প্রায় ৪৩৯ কোটি টাকার অন্যান্য দায় দেখানো হয়েছে কভার ফান্ড (বিভিন্ন দায়ের বিপরীতে রাখা তহবিল) হিসেবে।
ওই অর্থের সত্যতা পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি ব্যাংকের পরিদর্শকরা। ওই তহবিলের লেনদেনের বিষয়ে আরও বিশদ তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ থেকে ব্যাংকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে (এফআইইউ) অনুরোধ জানায়। এফআইইউ থেকে পরে এটি অনুসন্ধানের জন্য দুদকে আসে।
প্রসঙ্গত, অফশোর ব্যাংকিং হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের ব্যাংকিং ইউনিট। মূল ব্যাংকের সঙ্গে এর সংযোগ থাকে শুধু লাভ-লোকসানের হিসাবের ভিত্তিতে। ব্যবস্থাপনা, হিসাব, আমানত, ঋণ এসবই থাকে সম্পূর্ণ আলাদা। অফশোর ব্যাংকিংয়ের আমানত সংগ্রহ করা হয় বৈদেশিক মুদ্রায়, ঋণও দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। স্থানীয় মুদ্রায় কোনো কাজ হবে না।
আরএম/এসএম