আগুনের রাতে মুসা ম্যানশনের গ্রিল কেটে পালান মোস্তফা
র্যাবের সংবাদ সম্মেলন
রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় হাজী মুসা ম্যানশন ভবনের নিচ তলায় ১৫ হাজার টাকায় দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান (৪২) ও মোহাম্মদ মোস্তফা (৪৫)। কেরানীগঞ্জের বাসায় ছিলেন মোস্তাফিজুর। তবে ভবনের দোতলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করা মোস্তফা আগুনের ঘটনায় গ্রিল কেটে পালান।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার ভোরে র্যাবের বিশেষ অভিযানে আরমানিটোলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর রহমানকে রাজধানীর উত্তরা থেকে এবং তিন নম্বর আসামি মোহাম্মদ মোস্তফাকে বগুড়ার নন্দীগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-১০ ও গোয়েন্দা বিভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২৩ এপ্রিল রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানশন নামক আবাসিক ভবনের নিচ তলার কেমিক্যালের দোকান ও গোডাউন থেকে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়।
বিজ্ঞাপন
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪ জন নিহত হন এবং ২১ জন আহত হন। বর্তমানে আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। চারজন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়ে ঘটনাটি বড় আকার ধারণ করায় পুলিশ বাদী হয়ে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে মামলাটি করে।
মামলায় আসামিরা হলেন ভবনের মালিক মোস্তাক আহমেদ এবং কেমিক্যাল গোডাউনের মালিকরা। ঘটনার পর থেকেই র্যাব ছায়া তদন্ত করছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কেমিক্যাল গোডাউন মালিক মোস্তাফিজুর রহমান এবং মোহাম্মদ মোস্তফাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব কমান্ডার বলেন, ৪-৫ বছর ধরে তারা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় স্ব স্ব গোডাউনে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ মজুদ করেছিলেন। এ জাতীয় কেমিকেল মজুদের ব্যাপারে তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি ছিল না।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৫ হাজার টাকা ভাড়ায় আসামিরা প্রায় ৫-৭ বৎসর ধরে ওই ভবনের নিচতলা ভাড়া নিয়ে কেমিক্যালের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমান মঈন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী এবং মোহাম্মদ মোস্তফা মেসার্স আরএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। প্রতিষ্ঠান দুটি হাজী মুসা ম্যানশনের নিচ তলায় অবস্থিত। ঘটনার পর তারা আত্মগোপনে চলে যান।
তিনি বলেন, ভবনের মালিক মোস্তাক পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টা ১৮ মিনিটে আরমানিয়ান স্ট্রিটের হাজী মুসা ম্যানশনে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় হাজী মুসা ম্যানশনে লাগা আগুন শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
তিনি জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ভাস্কর দেবনাথ, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলগালা করা হয় হাজী মুসা ম্যানশন। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ভবনটি সিলগালা থাকবে।
এর আগে সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান, এটি অপরিকল্পিত কেমিক্যাল মার্কেট। এই ভবনে আমরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে পাইনি। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ১০-১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। এ ঘটনায় আমাদের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার মাহফুজ রিবেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন আরমানিটোলা খেলার মাঠের পাশে একটি কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের খবর পাই রাত ৩টা ১৮ মিনিটে।
প্রথমে ছয়টি ও পরে ভয়াবহতা বেড়ে গেলে আরও চারটিসহ মোট ১০টি ইউনিট পাঠানো হয়। পরে আরও বাড়িয়ে ১৯টি করা হয়। তারা ভবনের চারপাশে অবস্থান নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এছাড়া বাড়ির ছাদে আটকাপড়া লোকজনকে উদ্ধারে ল্যাডার ইউনিটও যুক্ত করা হয়।
জেইউ/আরএইচ