ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেছেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা সরাসরি সম্পর্কিত। তাই খাল উদ্ধার থেকে শুরু করে বর্জ্য অপসারণে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে নাগরিক সুবিধা অপর্যাপ্ত।

মঙ্গলবার (১৪ মে) অনলাইনে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদের চার বছর : নাগরিকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীর্ষক আইপিডি নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, কাউন্সিলর অফিস উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু ধরে কাউন্সিলরদের জবাবদিহিতা, জনসম্পৃক্ততা, এবং তৎপরতা নিশ্চিত করতে হবে। রাজস্ব বাড়ানো এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে ও ইন্টারেক্টিভ রাজস্ব ম্যাপ তৈরি করতে হবে।

আইপিডি পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার দুই মেয়রের ইশতেহারে প্রতিশ্রুত অনেক বিষয়ই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ছিল না। এগুলো ভোটারদের আকৃষ্ট করতেই বলেছিলেন তারা। আবার আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের কর্মপরিধিও ব্যাপক। গত চার বছরে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম খাল উদ্ধার ও জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। যার মধ্যে মোহাম্মদপুরের লাউতলা ও রামচন্দ্রপুর খাল, মিরপুরের প্যারিস খাল এবং সাতারকুলের সূতিভোলা খাল থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ ও আবর্জনা অপসারণ উল্লেখযোগ্য।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তরের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন, নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, হকার ব্যবস্থাপনায় পাইলট প্রজেক্ট, নিম্নআয়ের বসত এলাকায় সবুজায়ন ও অগ্নিঝুঁকি কমাতে ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফ্লাইওভারের পিলারে দৃষ্টিনন্দন স্ট্রিট আর্ট, ই-ট্রেড লাইসেন্স সেবা, নাগরিক সেবা সংশ্লিষ্ট সবার ঢাকা অ্যাপ ইত্যাদি।

আইপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার করার উদ্যোগটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ। এছাড়া ডিএসসিসির অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হল- শ্যামপুর, মান্ডা, জিরানী ও কালুনগর খালে উদ্ধারের প্রকল্প, পর্যটন ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ঐতিহ্য বলয় বাস্তবায়ন এবং ঢাকা ফটক ও লালকুঠির পুনঃসংস্কার কাজ, ইন্টিগ্রেটেড মাস্টারপ্ল্যান ফর ঢাকা সিটির মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও কর্পোরেশনের দুর্নীতি দূরীকরণের উদ্যোগ; নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি, রিকশাসহ অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রদান।

সেখানে বলা হয়, ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের জনসম্পৃক্ততা দিন দিন কমছে। এলাকার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উদ্যোগে কাউন্সিলরদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, রয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিল অফিসের সক্ষমতার অভাব। ঠিকাদারি ও ব্যবসায় আগ্রহ এবং এতে কাউন্সিলরদের আত্মীয়-পরিজনদের সম্পৃক্ততার অভিযোগের পাশাপাশি এলাকাবাসীর কাছে জবাবদিহিতার অভাব আছে। এসব সমস্যা দূর না করতে পারলে ওয়ার্ড কাউন্সিল থেকে কার্যকর নাগরিক সেবা ও নগর উন্নয়ন সম্ভব নয়।

আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, মেয়রদের বাকি এক বছরে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম সম্পন্ন করা কঠিন বিধায় সে চিন্তা করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তি কম বিধায় বিদ্যমান জলাধারগুলো উদ্ধার, যেসব স্থানে জলাবদ্ধতা হয় সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ। যেমন বর্ষার পূর্বেই ময়লা ও ড্রেইনেজ লাইন পরিষ্কার রাখতে হবে।

পরিকল্পনাবিদ রাকিবুল হক বলেন, সাতমসজিদ রোডের ডিভাইডারের গাছ কেটে ফেলায় পথচারী ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ এবং তাপমাত্রা বেড়েছে। একইভাবে মহাখালী থেকে গুলশান পর্যন্ত রোডের ডিভাইডারের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। মেয়র ও কাউন্সিলরদের এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। এ শহরে গাছপালার চেয়ে বিলবোর্ডের সংখ্যা বেশি। অথচ গাছপালা কাটতেই নগর সংস্থাসমূহের আগ্রহ বেশি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, এলাকাভিত্তিক ওয়ার্ড অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার মাধ্যমে দূষণ প্রতিরোধে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে। ল্যান্ডফিল এবং সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমির উপযুক্ততা বিশ্লেষণ বা মানদণ্ড ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে, যা নগরের দূষণ বাড়াচ্ছে।

পরিকল্পনাবিদ দ্বীপ দাস বলেন, পুরান ঢাকার ধোলাইখালের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও আড়াই বছর ধরে সীমানা নির্ধারণের জটিলতায় বাস্তবায়িত হয়নি। ধোলাইখালের মোটর পার্টস মার্কেট হতে উৎপন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভারী ধাতু (হেভি মেটাল) পরিবেশের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হলেও মেয়র বা কাউন্সিলরদের এ বিষয়ে ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।

উন্নয়ন গবেষক রেদওয়ানুর রহমান বলেন, শহরের বাসযোগ্যতা বাড়াতে নেচার বেসড সলিউশন, গ্রিন ও ব্লু নেটওয়ার্ক বাড়ানো এবং কংক্রিট এলাকা হ্রাসে উদ্যোগ নিতে হবে।

এএসএস/পিএইচ