সমুদ্র নিরাপত্তা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার আগ্রহী অস্ট্রেলিয়া। ঢাকা সফররত অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং মঙ্গলবার (২১ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ প্রেস ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সমুদ্র নিরাপত্তা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায় অস্ট্রেলিয়া। সমুদ্র খাতে কোনো দেশই এসব চ্যালেঞ্জ এককভাবে মোকাবিলা করতে পারে না। আমরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।

পেনি অং বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এই খাতে আমরা এক যোগে কাজ করব। মেরিটাইম সিকিউরিটি নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এর মধ্যে একটি ছিল-আমাদের কোস্ট গার্ডের মধ্যে গভীর সহযোগিতা। এ খাতে আমরা প্র্যাক্টিক্যাল সহযোগিতা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের একসঙ্গে যেমন কাজ করার সুযোগ রয়েছে তেমনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে আমরা যতটা সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে পারি; সেটা আলোচনায় এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের জোট কোয়াড নিয়ে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে পেনি অং বলেন, আমরা (অস্ট্রেলিয়া) কোয়াডের সদস্য। আমরা আঞ্চলিক অন্যান্য সংস্থারও সদস্য। আমরা আইওরার সদস্য। অস্ট্রেলিয়া মধ্যম শক্তির দেশ। অস্ট্রেলিয়া সুপার পাওয়ার নয়। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সহযোগিতায় বিশ্বাস করি। আমরা ভারত মসাগারীয় অঞ্চলে আইওরায় সহযোগিতা করছি। আমরা আসিয়োনের প্রথম ডায়লগ পার্টনার। অস্ট্রেলিয়ার শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধ ভারতীয় মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশ্বাসী।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে অস্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের আমরা সমাধান প্রত্যাশা করি। আমি মনে করি আপনাদের সরকার যা চায় আমরাও চাই। আমাদের চাওয়া মিয়ানমারের সংঘাতের সমাধান হোক। কেননা, রোহিঙ্গারা যেন তাদের প্রত্যাবাসনের আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে পেনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবিলায় আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। এখানে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতাও প্রয়োজন।

তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তারা উভয় দেশের জন্যই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। আমার আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করছি।

হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা অস্ট্রেলিয়ায় দক্ষ অভিবাসী পাঠাতে চাই।

গত ২৬  বছরে এটিই প্রথম কোনো অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর উল্লেখ করে ড. হাছান ব‌লেন, আন্তরিকতাপূর্ণ বৈঠকে বাংলাদেশের ১০০টি বিশেষ ইকনোমিক জোন এবং ৪০টি আইটি ভিলেজে অস্ট্রেলীয় বিনিয়োগ, বাংলাদেশিদের মৌসুমি কর্মসংস্থান, সেখানে প্রবাসীদের কল্যাণ, অবৈধ অভিবাসন রোধ, জ্বালানি ও পরিবেশ সংরক্ষণে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

হাছান মাহমুদ অস্ট্রেলিয়ার টেকনিকাল এন্ড ফারদার এডুকেশন সহায়তার আওতায় বাংলাদেশের টেকনিকাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে উন্নত প্রশিক্ষণ সহযোগিতা কামনা করেছি। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ইউটিসি'র সঙ্গে আমাদের চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রেডিট ট্রান্সফার সুবিধা রয়েছে, যেমনটি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

এনআই/এসকেডি