স্বাধীনতার ৫৩ বছর ও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মসজিদ এলাকাতে ৫৩টি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ৭০টির বেশি আয়োজন করেছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান মিশন গ্রিন বাংলাদেশ। দেশের ৬৪ জেলাতে গাছ লাগানোর শতাধিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে একদিনে ৫৩টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

বুধবার (৫ জুন) মিশন গ্রিন বাংলাদেশের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সংগঠনটির সদস্য এবং বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসমূহ এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেন।

আয়োজকরা জানায়, দিনব্যাপী এই আয়োজনের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলার ৫৩টি স্থানে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এতিমখানা বা মসজিদ এলাকায় গাছ লাগানো হয় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ুর সমতা বজায় রাখা, জমির ক্ষয়রোধে গাছের ভূমিকা বিষয়ে সচেতনতামূলক মানববন্ধন ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া সকলের মধ্যে গাছ লাগানোর সচেতনতা বাড়ানোর জন্য 'গাছ লাগানোর প্রতিজ্ঞা' বিষয়ক সিগনেচার ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়, প্রতিটি আয়োজনে কিছু গাছ শিক্ষার্থীদের মাঝেও বিতরণ করা হয়।

আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় ছিল হেলদি লিভিং, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ, জেসিআই ঢাকা মেট্রো, আরডিআরসি ও ব্রান্ড অ্যান্ড ভিজ্যুয়ালসহ স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কিছু সহযোগী সংগঠন।

ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচি প্রসঙ্গে মিশন গ্রিন বাংলাদেশের আহ্বায়ক আহসান রনি বলেন, দেশের মানুষদের মাঝে বৃক্ষরোপণের সচেতনতা বাড়াতে এবং বর্ষা মৌসুমে সঠিকভাবে যাতে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করে এমন বিষয়গুলো জানাতেই এমন উৎসব সারা বাংলাদেশেই আয়োজন করার চেষ্টা করেছি আমরা। ৫৩টি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে স্থানীয় সংগঠনগুলো এবং ভলান্টিয়ারদের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা অতুলনীয় ছিল। 

তিনি বলেন, ফান্ডের স্বল্পতার পরেও আমরা সফলভাবে সবার সহযোগিতায় এতো বিশাল আয়োজন করতে পেরেছি এটি আমাদের জন্য এক গর্বের বিষয়। সামনে পরিবেশ নিয়ে আরও বড় বড় আয়োজন নিয়ে আসবে মিশন গ্রিন বাংলাদেশ। ৬৪ জেলায় গাছ লাগানোর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

মিশন গ্রিন বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ আবুল বাশার মিরাজ বলেন, পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে হলে তরুরাজির শ্যামল ছায়ায় প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তাই বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের প্রত্যেকের প্রতি বছর অন্তত দুটি করে বৃক্ষরোপণ করা দরকার। তাই এই সম্পদের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি পূরণের জন্য লাগামহীন বৃক্ষ-নিধন বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ জোরদার করার প্রতি আমাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণ করা।

আয়োজনের সহযোগী চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও জলবায়ু নীতি ও অর্থায়ন বিশ্লেষক এম জাকির হোসেন খান বলেন, ১টা পূর্ণ গাছ প্রতিদিন ৪ জন মানুষের অক্সিজেন প্রদান করে, প্রায় ৬-৮ জন মানুষের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। অথচ গত ২০১০ সাল থেকে গড়ে প্রায় ২.৫% বনভূমি হারাচ্ছি, শহরগুলো হিট আইল্যান্ডে পরিণত হচ্ছে। দেশব্যাপী বৃক্ষ রোপণকে ছাত্র ছাত্রীদের উৎসবে পরিণত করার মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবেশ শিক্ষার বিস্তার, পরিবেশ সুরক্ষায় সবুজ উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। মিশন গ্রিন বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ভবিষ্যতে সবুজ বাংলাদেশ সৃষ্টির এ প্রক্রিয়ায় যাত্রা অব্যাহত রাখবে।

আয়োজন সহযোগী জেসিআই ঢাকা মেট্রো'র সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, সবুজ বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশের তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশকে সবুজ করে তোলার জন্য একত্রে কাজ করতে হবে। জেসিআই সারাদেশের তরুণদের নিয়ে সমাজের কল্যাণে কাজ করে চলেছে।  মিশন গ্রিন বাংলাদেশের সার্বিক কার্যক্রম সমাজের ও পরিবেশের কল্যাণে এবং সারাদেশের এতো বিশাল আয়োজনে আমরা থাকতে পেরে আনন্দিত। আজ মিশন গ্রিন বাংলাদেশ পরিবেশ বিষয়ক একদিনের সবচেয়ে বড় আয়োজন করে দেখালো; টিমকে অভিনন্দন।

আরডিআরসি'র প্রধান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, দেশে বছরে ১১ লক্ষের বেশি গাছ কাটা হচ্ছে।সারা দেশে প্রতিবাদের পাশাপাশি গাছ রক্ষার জন্য পরিবেশের কথা ভেবে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। গাছ লাগাতে হবে। মিশন গ্রিন বাংলাদেশ এক্ষেত্রে একটি দারুণ প্রচেষ্টা। আজকে দেশব্যাপী গাছ লাগানোর আয়োজনে যুবকদের অংশগ্রহণ আমাদেরকে অনেক উৎসাহিত করেছে।

টিআই/এমএসএ