কোটাবিরোধী আন্দোলন
ঢাকার সড়কে ভোগান্তি চরমে, এক স্থানেই আটকা ৪ ঘণ্টা
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে দুপুর একটায় চানখারপুল থেকে নীলাচল পরিবহনে উঠেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। তবে বিধিবাম। দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ নীলক্ষেত এসে বাস পৌঁছাতেই পড়তে হয় অবরোধের মুখে। কয়েকবারের চেষ্টায় কোনো রকমে নীলক্ষেত মোড় পার হতে পারলেও সায়েন্সল্যাব মোড় আর টপকাতে পারেনি বাসটি। আর এতে করে ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাসটিতেই বসে রয়েছেন তিনি।
এমন অবস্থা শুধু আব্দুর রাজ্জাকের একার নয়। শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। উপায় না দেখে অনেকেই পায়ে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ শুরু হয়। নীলক্ষেত, চানখারপুল, শাহবাগ, তাঁতীবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় করা হয় সড়ক অবরোধ। দুপুর থেকে দীর্ঘ সময়ের এই অবরোধের ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঢাকার বেশিরভাগ এলাকা।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
বিকেলে সরেজমিনে মিরপুর সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের উভয় পাশেই গাড়ির দীর্ঘ সারি। ক্লান্ত হয়ে অনেকেই গাড়িতে বসে ‘বিরক্তিকর’ সময় কাটাচ্ছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, নীলক্ষেত থেকে বই কিনে টঙ্গী যাওয়ার জন্য বিকাশ পরিবহনের বাসে উঠেছিলাম। কিন্তু তারপরেই বাস অবরোধের মুখে পড়ে, এখন বইগুলো নিয়ে আমি কীভাবে যাব? একা হলে না হয় পায়ে হেঁটে কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে অন্য বাসে যেতে পারতাম। অবরোধ ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছি। ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাসে বসে আছি।
হাবিবা খানম নামের এক যাত্রী বলেন, বাচ্চা নিয়ে দুপুর থেকে বাসে বসে আছি। কোথায় যাব, কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। কখন এই অবরোধ ছাড়বে, তাও বলতে পারছি না।
অবরোধের কারণে বিপাকে বাসচালক-হেলপাররা
শিক্ষার্থীদের অবরোধে সড়কে যানচলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসচালক ও হেলপাররা। একই স্থানে বাস আটকে থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিতে পড়ার শঙ্কাও জানিয়েছেন তারা।
নীলাচল পরিবহনের বাসের চালক আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম ট্রিপ নিয়ে যাচ্ছিলাম। এর মধ্যেই অবরোধের মুখে পড়তে হয়েছে। শুনেছি কোটা বাতিলের জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আমরা সাথে সাথেই মালিককে ফোন দিয়ে জানিয়েছি। আজকে সারা দিনে অনেক বড় আর্থিক ক্ষতি হয়ে গেল।
ঠিকানা পরিবহনের বাসের চালক আব্দুল লতিফ বলেন, এটা আমার দ্বিতীয় ট্রিপ ছিল। আমাদের এক দিনে তিন হাজার টাকা জমা দিতে হয়। এখন সারাদিন এখানে আটকা পড়ে আছি। জমার টাকা কই পাব? আর এই অবরোধ কখন ছাড়বে, সেটিও বুঝতে পারছি না।
অন্যদিকে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে চাকরিজীবীদেরও। অফিস-আদালত ছুটি হওয়ার পর বাসায় ফেরার জন্য কোনও মাধ্যম না পেয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে হাঁটতে দেখা যায় অনেককে।
রবিউল ইসলাম নামের এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, অফিস থেকে বের হওয়ার পর কোনও গাড়ি পাইনি। ব্যক্তিগত গাড়িও চলতে দিচ্ছে না। আজিমপুর থেকে কিছুটা পথ রিকশায় এসেছি। নীলক্ষেত মোড়ে আবার অবরোধ। সেজন্য এখন পায়ে হেঁটেই বাসার দিকে যাচ্ছি।
অন্যদিকে, আগের মতোই এখনও সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। কখন অবরোধ শেষ হবে বা পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কেউ কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
আরএইচটি/কেএ