আটকদের খোঁজে ডিবি কার্যালয়ের সামনে স্বজনরা
ছেলের সন্ধানে বরিশাল থেকে ডিবি কার্যালয়ে ছুটে এসেছেন বছিরন বেগম / ছবি : ঢাকা পোস্ট
বরিশাল শহরের রুপাতলী বাস স্ট্যান্ড এলাকার মুদি দোকানি সোহাগ হাওলাদার। গত ২৪ জুলাই রাজধানীর হেলথ এইড হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক স্বজনকে দেখতে এসে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর আর তার সন্ধান পায়নি পরিবার।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোহাগের খোঁজে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষায় দেখা যায় মা বছিরন বেগমকে।
বিজ্ঞাপন
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৪ তারিখের পর থেকে ছেলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। শুনেছি তাকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে আসছে। এ জন্য ডিবি কার্যালয়ে আসছি। কিন্তু ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।
বিজ্ঞাপন
বছিরন বেগম বলেন, আমার ছেলে বরিশালের রুপাতলি বাস স্ট্যান্ডের মুদি দোকানি। ঢাকা এসেছিল রোগী দেখতে। হাসপাতাল থেকেই তাকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। একজন ফোন করে জানিয়েছে, সোহাগকে ডিবিতে আছে।
ছেলের সন্ধানে পাগল প্রায় এই মা কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। কোনো রাজনীতির সঙ্গেও সে জড়িত না। আমার স্বামী নেই। এই ছেলেই আমাকে দেখাশোনা করে। তার ১৭ মাসের মেয়ে আছে। তার আয়ে আমার পরিবার চলে। গত ২৪ তারিখ দুপুর ১২টার থেকে তার কোনো সন্ধান পাচ্ছি না। কয়েকদিন আগে আমার আরেক ছেলেকে ডিবি থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে, ছেলে সুস্থ আছে।
কেরাণীগঞ্জের আটিবাজার থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া বেকারি ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীনের সন্ধানে ডিবি কার্যালয়ের সামনে বার বার ঘুরপাক খাচ্ছেন স্ত্রী শারমিন আক্তার। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় সাদা পোশাকে একদল লোক তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়।
ডিবি কার্যালয়ের সামনে কথা হয় শারমিনের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইসড হাসপাতালের নার্সিং ইনচার্জ। তার স্বামী বেকারি ব্যবসায়ী। দুই সন্তানকে তারা নিয়ে আটিবাজার এলাকায় বাস করেন।
শারমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ও (স্বামী) তো রাজনীতি করে না। আমি তো বুঝতেই পারছি না কেন তুলে নেওয়া হলো। বাসায় যারা আসছে, তারা কোনো পরিচয় দেয়নি। কারা নিয়ে গেছে কিছুই জানি না, কোনো তথ্যও পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আমাদের দুই সন্তান। ৮ বছরের এক ছেলে ও তিন বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। মেয়ের হার্টে সমস্যা, কিছু দিন আগে অপারেশন হয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না।
শারমিন অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীর নিউরো সমস্যা আছে। উচ্চ রক্তচাপ আছে। আমি ওষুধ নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে আসছি। গতকাল রাত ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কেউ খোঁজ দিচ্ছে না। অনুরোধ-মিনতি করছি যে, অন্তত ওষুধগুলো তার হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। কেউ শোনেনি।
তিনি বলেন, মন তো মানছে না। রাজনীতি না করা লোকটাকে কেউ ফাঁসালো কি না জানি না। যারা তুলে নিয়ে আসছে, তাদের সঙ্গে কোনো নারী সদস্য ছিল না। আমি একজনকে চিনেছিলাম, তিনি পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর রহমান। আর কাউকে চিনিনি। আমার সঙ্গে চরমভাবে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। হাত মোচড় দিয়ে পেছনে ধরে রাখা হয়েছে। আমি বলেছি, কী কারণ বলেন, এতো রাতে এলেন কেন? কোনো কথা শোনেননি তারা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর আজিজ মহল্লা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে আনা হয় স্থানীয় সাংবাদিক (তদন্তচিত্র পত্রিকার সম্পাদক) তাহের আহমেদ তাহেরী ও তার ভাগনে সাদ্দামকে। সাদ্দাম রেডএক্স নাম একটি ডেলিভারি সাপ্লাইয়ার কোম্পানির কর্মী।
তাহেরীর বোন রাজিয়া মিন্টো রোডে সাংবাদিকদের বলেন, কাল রাত আটটার দিকে তুলে আনা হলো, কেন আনা হলো কিছুই জানানো হলো না। আমি রাতেও আসছি, আজ সকালেও আসছি, কিন্তু ডিবি পুলিশ কথা বলছে না। তাহেরী মোহাম্মদপুর ও জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসা নিয়ে অনেক রিপোর্ট করেছে। সে কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা ভাগনেসহ তাহেরীকে ফাঁসাতে পারে।
সরেজমিনে মিন্টো রোড এলাকায় দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় ডিবি কার্যালয়ের দু’পাশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া ও ব্যারিকেড দিয়ে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের লোকজন ছাড়া অপরিচিতরা প্রবেশ করতে গেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জেইউ/কেএ