কাজ শুরু করেছে দুদক
বিএসএমএমইউর সাবেক ভিসি ও কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও তার পিএস ডা. রাসেল এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়-কাস্টমস হাউজ, চট্টগ্রাম) আরজিনা খাতুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
সোমবার (১৯ আগস্ট) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, বিএসএমএমইউর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও তার পিএস ডা. রাসেল ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য করে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ আদায়, যোগ্যতার ঘাটতি নিয়ে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে অনিয়মের আশ্রয়, নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ প্রদান, অনৈতিক অর্থ উত্তোলন, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কমিশনে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
২০২১ সালের ২৯ মার্চ একাদশ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তার বিরুদ্ধে সীমাহীন নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দুই হাজারের বেশি নিয়োগ দিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের দাবি।
এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়), কাস্টমস হাউজ, চট্টগ্রাম আরজিনা খাতুনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগে কমিশনে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সাবেক আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে। আরজিনার নামেও রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ।
রাজধানীতে বিলাসবহুল ইন্টেরিয়রে মোড়ানো ফ্ল্যাট, গ্রামে আলিশান বাড়ি, পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে জমিসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মাত্র ৩ বছরে আরজিনা কিনেছেন অন্তত ৫০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। যার ২০০ ভরিই চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আনা হয়েছে বলে দুদকের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। আরজিনা খাতুন বর্তমানে রাজস্ব বোর্ডের মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়ের দ্বিতীয় সচিব। এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপকমিশনার ছিলেন তিনি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ১০ জুন আরজিনার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের খতিয়ান তুলে ধরে দুদকে অভিযোগ জমা দেন এক ব্যক্তি। তাতে বলা হয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি, মানি লন্ডারিং, স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ আর আলোচিত এনবিআরের সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের সংস্পর্শে এসে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন আরজিনা।
দুদকে জমা অভিযোগের সূত্র ধরে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুরে প্রায় ২ হাজার বর্গফুটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে তার। ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় কেনা ফ্ল্যাটটিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনসহ দলিলে ফ্ল্যাটটির দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ৬৮ লাখ। ফ্ল্যাটটি কেনার জন্য তিনি ২০২০ সালে ব্যাংক ঋণ নেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঋণ নেওয়ার ১ বছর আগেই ফ্ল্যাট কিনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। তাও ঋণের টাকার দ্বিগুণ দামে। প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে বাসায় বিলাসবহুল আসবাব ও অত্যাধুনিক ইন্টেরিয়র করেছেন। আরজিনার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর নারোয়া ইউনিয়নের তালুতপারা গ্রামে। কাস্টমসে চাকরির ৩ বছরের মধ্যে গ্রামের ছন আর টিনের বাড়িটিকে বদলে করেছেন আলিশান এক ভবন।
চট্টগ্রামে বদলির পর ২০২২ সালেই গ্রামে তার পরিবারের সদস্যদের নামে কিনেছেন ৫টি জমি। যার বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা।
২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি অন্তত ৫০০ ভরি স্বর্ণ আর ডায়মন্ডের অলঙ্কার কিনেছেন নগদ টাকায়। যার ২০০ ভরি এক সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ৩ ধাপে চোরাচালানের মাধ্যমে আনার তথ্য ও দালিলিক প্রমাণ দুদকে করা অভিযোগের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে। ২০২২ থেকে শেয়ার ব্যবসাও করেছেন তিনি। এক দিনে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগে দ্বিগুণ লাভের নজিরও আছে তার। তার তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল নগদ টাকা ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগও আছে।
আরএম/জেডএস