কাউন্টারগুলো একদম ফাঁকা। নেই যাত্রী, টিকিট বিক্রেতা। পুরো টার্মিনাল জুড়েই প্রায় সুনসান নীরবতা। সারি সারি বাস থাকলেও টার্মিনাল ছাড়ছে না একটিও। ড্রাইভার, হেলপার কারও দেখা নেই। সেই সঙ্গে আনাগোনা নেই যাত্রীদেরও। ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে যেখানে ব্যাপক ব্যস্ত থাকার কথা, সেখানে এমন ভিন্ন রূপ পেয়েছে মহাখালীর বাস টার্মিনাল।

দেখা পাওয়া গেল ঢাকা থেকে শেরপুর চলাচলকারী সোনার বাংলা নামক বাসের হেলপার রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে। বাসটি ধোয়া মোছার কাজ করতে এসেছেন তিনি। লকডাউনের শুরু থেকেই দূরপাল্লার সব বাসগুলো টার্মিনালেই পরে আছে। বাস সংশ্লিষ্টরা মাঝে মাঝে এগুলো ধোয়া মোছার কাজ করেন।

হেলপার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বেকার বসে আছি। দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ থাকায় আমাদের আয়ও বন্ধ। প্রতিবার এই সময় টার্মিনালে মানুষের উপচে পড়া ভিড় থাকত। দম নেওয়ার সময় পেতাম না। টিকিট কাউন্টারগুলোতেও অতিরিক্ত ভিড় থাকতো। কিন্তু আজ একদম ফাঁকা। পুরো টার্মিনাল জুড়েই সুনসান নীরবতা।

মহাখালী বাস টার্মিনালের ঠিক সামনের মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন সিএনজি চালক মকিদুর রহমান। তিনিও জানালেন একই কথা। মকিদুর রহমান বলেন, ঈদের আগে যাত্রীদের চাপ থাকে দূরপাল্লার বাস টার্মিনালগুলোতে। আমিও বারবার যাত্রী নিয়ে এসব টার্মিনালে ট্রিপ দিতাম। কিন্তু এবার দূরপাল্লার বাস বন্ধ, টার্মিনালও ফাঁকা।

এদিকে ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (মহাখালী) সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক বলেন, দূরপাল্লার বাস বন্ধের কারণে পরিবহন শ্রমিকদের কাজ না থাকায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে। আমরা খেয়ে-পড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে চাই।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের অনুমতিসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। দাবি বাস্তবায়ন না হলে ঈদের নামাজ শেষে সারাদেশের মালিক ও শ্রমিকরা নিজ নিজ এলাকায় বাস ও ট্রাক টার্মিনালে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া ঈদের পরে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

গত শনিবার (৮ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলন থেকে এ হুঁশিয়ারি দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

তাদের দাবিগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার পরিবহনসহ সব গণপরিবহন এবং স্বাভাবিক মালামাল নিয়ে পণ্য পরিবহন চলাচলের সুযোগ দিতে হবে; লকডাউনের কারণে কর্মহীন সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের আসন্ন ঈদের আগে আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে ও লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মালিকদের (শ্রেণিমতো) যানবাহন মেরামত, কর্মচারী ও শ্রমিকের বেতন, ভাতা ও ঈদ বোনাস ইত্যাদি দেওয়ার জন্য নামমাত্র সুদে ও সহজ শর্তে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিতে হবে।

এএসএস/এমএইচএস