কন্যা শিশু দিবসে ব্যতিক্রমী ‘গার্ল টক’ আয়োজন
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষ্যে ‘গার্ল টক’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী আয়োজন করে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে পৃথক একটি সেশনে পাঁচজন কন্যা শিশু পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় (জলবায়ু পরিবর্তন, যৌন হয়রানি, শিশু শ্রম, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বায়ু দূষণ) নিয়ে তাদের বর্তমান ভাবনা উপস্থাপন করে। একইসঙ্গে কীভাবে এই বিষয়গুলো তাদের ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, সে বিষয়টিও তারা তুলে ধরে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে রাজধানীর একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণই ছিল গার্ল টক শীর্ষক আলাদা সেশন। অনুষ্ঠানে প্রায় ৪০ জন কিশোর-কিশোরী অংশগ্রহণ করে, পাশাপাশি উন্নয়ন সংস্থা, কর্পোরেট খাত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
গার্ল টক আলোচনায় এ বছর বিশেষভাবে তরুণ জলবায়ু কর্মীদের ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়, যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এসময় অংশীদারদের কন্যা শিশুদের গুরুত্ব দেওয়ার প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয় এবং পাশাপাশি তাদের শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং বাল্যবিবাহ মুক্ত ভবিষ্যতের অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে জোর প্রদান করা হয়।
আলোচনায় ইউথ ফর এনডিসিসের সদস্য জাওয়াতা আলম বলে, যেকোনো দুর্যোগ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরিণতিতে নারী ও মেয়েরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর জন্য বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার, অভিযোজন এবং প্রশমন কৌশলগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে। আমাদের প্রজন্মের মেয়েদের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করা উচিত, যাতে আমরা বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত হতে পারি, আমাদের আওয়াজ তুলতে পারি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি।
বিজ্ঞাপন
এসময় এনসিটিএফের সদস্য তাবাসসুম রহমান নাবিয়া বলে, আমাদের দেশের শিশুশ্রম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে এই সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। আমি কন্যা শিশুদের পক্ষ থেকে এবং দেশের সব শিশুর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি যাতে তারা শিশুশ্রম বন্ধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট আলোচনায় বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইসর মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, এই বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী মেয়ে ও নারী। তাদের ক্ষমতায়ন ছাড়া কোনো কার্যকর অগ্রগতি সম্ভব না। নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমাদের প্রত্যাশা যে, মেয়েরা তাদের শিক্ষা সম্পন্ন করবে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এবং নিজেদের জীবনের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।
এসময় ইউএন ওমেন বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতিনিধি দিলরুবা হায়দার বলেন, আজকের দিনে মেয়েদের নিজেদের সম্পর্কে পুরোনো ধারণাগুলো নতুন করে গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে আমাদের অংশ নিতে হবে। পুরুষদের দ্বারা সুরক্ষিত হওয়ার ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে তারা নিজেদের সুরক্ষা করতে সক্ষম হবে এই ধারণা গড়ে তুলতে হবে। এটি তখনই সম্ভব হবে যখন তারা শিক্ষিত হবে এবং আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হবে। আর সেখান থেকেই প্রকৃত ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর রিফাত বিন সাত্তার বলেন, এ আয়োজনটি সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের ‘গার্ল টক’ ক্যাম্পেইনকে এ বছরের আন্তর্জাতিক কন্যা শিশুর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কন্যা শিশুর চোখে ভবিষ্যৎ দেখি’ এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছে। ‘গার্ল টক’ তরুণী মেয়েদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরতে এবং তাদের সমস্যার সমাধান, প্রয়োজনীয় সেবায় প্রবেশাধিকার, তাদের অধিকার বাস্তবায়ন ও সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করতে সহায়তা করার দিকে জোর দেয়।
টিআই/এসএসএইচ