অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের প্রতিবেদনে দুর্নীতিবাজদের অনেকের শাস্তি হয়েছে, থাকতে হয়েছে তটস্থ। তিনি অনেককে সংবাদের শিরোনাম করেছেন। সংবাদের জন্য হন্যে হয়ে ছুটে চলা সংবাদের ফেরিওয়ালা এই রোজিনা ইসলামই এখন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের শিরোনাম।

কয়েকদিন ধরে আলোচনার শীর্ষে থাকা প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম এখন কারাগারে অন্তরীণ। আছেন গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে। কারাগারের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দিঘরে প্রায় নির্ঘুম রাত কেটেছে তার। মেঝেতে পাতা বিছানায় সন্তানের সঙ্গহীনতায় একা কেঁদেছেন তিনি।

কারাসূত্র ও স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায়। এরপর কারাবিধি অনুযায়ী তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। শারীরিক নানান জটিলতার ফলে বহু ওষুধ তাকে সেবন করতে হয়। কারাগারে তার জন্য বাসা থেকে পরিধেয় কাপড়-চোপড় দেওয়া হয়। মহিলা কারাগারের রজনীগন্ধা কোয়ারেন্টাইন ভবনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে রাখা হয়। সেখানে আছেন আরও চার নারী। তাদের তিনজন হাজতি আর একজন কয়েদি। সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন তার বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন।

জানতে চাইলে বুধবার (১৯ মে) রাতে রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কারাগারে যাওয়ার পর থেকে রোজিনার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, রোজিনা ভালো আছেন।’

কারাগারের একটি সূত্র জানায়, রোজিনাকে কারাগারে পৌঁছানোর পরপরই ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাকে রাতের খাবার সরবরাহ করা হয়। তিনি রাতে খেয়েছেন। রোজিনার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু তিন স্বজনকে নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও রোজিনার সাক্ষাৎ পেতে ব্যর্থ হন। কারা কর্তৃপক্ষ মিঠুকে জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে কোনো স্বজনের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না বন্দিদের।

কারা সূত্রে আরও জানা গেছে, কারাগারে যাওয়ার পর রোজিনা নিয়ম অনুসারে ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। কারাগারে তার প্রথম রাত কেটেছে নির্ঘুম। মশারি ছাড়া মেঝের বিছানায় নির্ঘুম কেটেছে রাত। 

রোজিনার মুক্তির দাবিতে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ। মানুষ আওয়াজ তুলছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেসব ঘটনার প্রতিবেদন দেখতে পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু রোজিনা নিজে তা দেখতে পারছেন না। কারণ যেখানে তাকে রাখা হয়েছে সেখানে টেলিভিশন সেট নেই। সেই ব্যবস্থা না থাকায় তাকে সংবাদ জানতে হচ্ছে পরের দিনের খবরের কাগজে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার জামিন শুনানি বৃহস্পতিবার।

রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু বুধবার সকালে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট থেকে আমি কারাগার প্রাঙ্গণে ছিলাম। কারা কর্তৃপক্ষ করোনাকালের অজুহাত দিয়ে আমাদের সঙ্গে রোজিনার সাক্ষাৎ করতে দেয়নি। পরে সেখান থেকে বিকেলে রওনা দিয়ে রাত ১১টায় ঢাকায় ফিরি। বৃষ্টিপাতের ফলে রাস্তায় পানি জমে গিয়েছিল। ঢাকায় ও কাশিমপুরে টানা ২৬ ঘণ্টা আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। নিজের চোখে দেখতে হয়েছে রোজিনার ওপর নিপীড়ন। রোজিনা অনুরোধ করেছে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। সেটা সম্ভব হয়নি।

মনিরুল ইসলাম মিঠু বলেন, মঙ্গলবার রোজিনাকে যে প্রিজন ভ্যানে কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়েছে তাতে চোর-ডাকাতদের নেওয়া হয়। তীব্র গরমের মধ্যে রোজিনাকে ওই গাড়িতে করে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

মিঠু আরও বলেন, আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছিলাম পুলিশ পাহারায় আমার গাড়িতে করে রোজিনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এ-ও বলেছিলাম বিশেষ গাড়ির ব্যবস্থা করতে। তারা আমার কোনো অনুরোধ রাখেনি।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গত সোমবার দুপুরে বাসা থেকে বের হন রোজিনা ইসলাম। তারপর আর বাসায় ফিরতে পারেননি। সেদিন সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে দুপুর থেকে তাকে টানা পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। তাকে সেখান থেকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পিএসডি/এসএম/জেএস