স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা মামলায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৮৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক। একই সঙ্গে দ্রুত এ মামলায় রোজিনাকে জামিন দিয়ে তাকে নির্যাতনের বিষয়ে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এক বিবৃতিতে নাগরিকরা বলেন, আমরা সরকারের কাছে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার ও রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি জোর দাবি করছি।নাগরিক সমাজসহ সবাই আশা করেছিল, বৃহস্পতিবারই রোজিনার জামিন মঞ্জুর হবে। কিন্তু জামিন আদেশের দিন রোববার ধার্য করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, রোজিনাকে জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আদালতের এই বিলম্ব আমাদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। রোজিনার বিরুদ্ধে করা মামলার ধারাগুলোর প্রতিটি জামিনযোগ্য। জামিন পেলে এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে কোনো রকমের জটিলতা সৃষ্টি হতো না।

বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মনগড়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ নারী সাংবাদিক রোজিনাকে গ্রেফতারের পর দেশ-বিদেশে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ এবং প্রতিক্রিয়া হয়। জাতিসংঘও এ গ্রেফতারের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বিদেশি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বিবৃতিদাতারা হলেন শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সুলতানা কামাল, হাফিজ উদ্দিন খান, রাশেদা কে চৌধূরী, হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ্দীন মালিক, জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আলী রীয়াজ, স্বপন আদনান ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।

শিক্ষাবিদদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি আর আবরার, আসিফ নজরুল, গীতি আরা নাসরীন, রোবায়েত ফেরদৌস, সামিনা লুৎফা, তানজিম উদ্দিন খান, শাহনাজ হুদা, সুমাইয়া খায়ের, জোবায়দা নাসরিন, কাজী মারুফুল ইসলাম, গোবিন্দ চক্রবর্তী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনু মুহাম্মদ, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, সাঈদ ফেরদৌস, নাসরিন খন্দকার ও সায়েমা খাতুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইদুল ইসলাম ও সাদাফ নূর, গবেষক মেঘনা গুহঠাকুরতা ও নোভা আহমেদ।

বিবৃতিতে নাম রয়েছে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, পারভীন হাসান, ফিরদৌস আজিম, আকমল হোসেন, এশিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মাহফুজা খানম, মানবাধিকারকর্মী শারমীন মুরশিদ, শিরিন প হক, সঞ্জীব দ্রং, পল্লব চাকমা, ফস্টিনা পেরেরা, অরূপ রাহী, মুক্তশ্রী চাকমা, নূর খান, রেহনুমা আহমেদ, ইলিরা দেওয়ান, সুব্রত চৌধুরী, ইজাজুল ইসলাম, হানা শামস আহমেদ, রেজাউর রহমান ও সালমা আলীর।

আরও রয়েছেন সেলিম জাহান, শামীম আজাদ, বিনা ডি কস্টা, আবু সাঈদ খান, তবারক হোসেইন, পার্সা সাজিদ, লুবনা মরিয়ম, নায়লা জেড খান, সায়দিয়া গুলরুখ, ফওজিয়া খন্দকার, কাজী সুফিয়া আখতার, সুস্মিতা প্রিথা, ফিলিপ গাইন, রেজানুর রহমান, কনক চাকমা, মাহবুবুর রহমান, তায়েবা বেগম, শিমুল সাহা, কামার আহমেদ, সারা আফরিন, নাসিমুন আরা হক, রোজিনা বেগম ও আহমেদ কবির কিশোর।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্তা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। রাতে তাকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার (২০ মে) রোজিনার জামিন আবেদনের শুনানি হলেও আদেশ হয়নি। আদালত আদেশের দিন ধার্য করেছেন রোববার। রোজিনা এখন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে।

এদিকে সাংবাদিক সমাজ, নাগরিক সমাজ, এমনকি সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকেও রোজিনাকে গ্রেফতার অনাকাঙ্ক্ষিত এবং তা সরকারকে বিব্রত করেছে বলে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।

এমআই/ওএফ