সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, সরকারের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপনীয় তথ্য যদি কেউ শত্রু পক্ষকে দিয়ে দেয়, সেই অপরাধের শাস্তি বিধান করার জন্য এ অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট করা হয়েছে। এটা মিলিটারি সিক্রেটস সংক্রান্ত আইন। মনে হয়, রোজিনাকে ফাঁসাতে হবে এ জন্য তাড়াহুড়া করে কোনো আইন খুঁজে না পেয়ে এ আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (২১ মে) অনলাইনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের অন্যায় গ্রেফতার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের প্রতিবাদে এক নাগরিক প্রতিবাদ সভায় তিনি এ কথা বলেন।

শাহদীন মালিক বলেন, নিষিদ্ধ স্থানে সংরক্ষিত প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত নকশা, মডেল, প্ল্যান ইত্যাদি যদি কেউ শত্রু রাষ্ট্রকে পাচার করে সেই অপরাধ রোধের জন্য এই আইন। এই আইনে যদি কোনো অপরাধ হয়, সে অপরাধের অভিযোগে সেনা সদস্যরা প্রবেশ নিষিদ্ধ স্থানে অর্থাৎ ক্যান্টনমেন্টে অথবা তার আশেপাশের এলাকায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। যেহেতু এটা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপনীয় তথ্য এজন্য সরকার চাইলে সিক্রেট ট্রায়াল হতে পারে। এছাড়াও গোপনীয় তথ্য যদি ফাঁস হয়ে যায় তাহলে আইন ধরে নেবে যে তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এর সঙ্গে জড়িত। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, একজন সাংবাদিকের যার সচিবালয়ে যাওয়ার অনুমতি আছে তার তথ্য চাওয়ার অধিকারও আছে। তাই এ আইন এখানে প্রযোজ্য হতে পারে না।

আরও পড়ুন : স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল সংস্কার চান চিকিৎসক নেতারা

তিনি আরও বলেন, আর ভিডিওর ব্যাপারে কথা হলো যে, এটা কোনো প্রমাণ হতে পারে না। এটা কোর্টে উপস্থাপনের আইনি কোনো ভিত্তি নেই। এরপরও যদি জামিন না হয়, তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখার কোনো সুযোগ বিচার বিভাগই রাখল না।

এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে কতগুলো মিথ ছিল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা যাবে না। এখন সেই মিথ ভেঙে পড়েছে, এমনকি সাংবাদিককে বন্দি করে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।  যেসব বিষয় মৌলিক অধিকার বলে প্রতিষ্ঠিত সেগুলো যে শুধু পদদলিত হচ্ছে তা-ই নয়, মনে হয় যেন আমরা সামন্ত যুগে ফিরে যাচ্ছি। এটা শুধু প্রশাসনের কয়েকজন ব্যক্তির উদ্ধত আচরণের বিষয় নয়, পুরো ব্যবস্থাটাই ভঙ্গুর অবস্থার প্রতিফলন।

তারা আরও বলেন, একতাবদ্ধ হয়ে দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের জন্য সোচ্চার হয়ে আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে এটি আরও বেড়ে যাবে, চরম পর্যায়ে চলে যাবে। শুধু রোজিনার মুক্তিই নয়, তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং যারা তাকে লাঞ্ছিত করছে তাদের শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু বাকস্বাধীনতা নেই। একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে দুর্নীতি উন্মোচনের জন্য পুরস্কৃত না করে অবমাননা করছি। এটি সত্যিই লজ্জাজনক।

আরও পড়ুন : নথি চুরির মামলায় ‘চুরি হওয়া’ নথির তথ্য নেই

প্রতিবাদ সভায় আরও যুক্ত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি আব্দুল মতিন, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আদিবাসী নেতা জনাব সঞ্জীব দ্রং, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, অর্থনীতিবিদ ড. হাসান মনসুর, মানবাধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন, অধ্যাপক পারভীন হাসান, সুজন কোষাধাক্ষ্য আবু নাছের বখতিয়ার, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি