গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ক্রয়, ভুয়া বিল-ভাউচার প্রস্তুত, কেনাকাটায় টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে।

রোববার (১২ জানুয়ারি) দুদকের গোপালগঞ্জ সমন্বিত জেলা থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযানে ওই সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযানে আসবাবপত্র ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বেঞ্চ ক্রয় ও নিম্নমানের মালামাল ক্রয়ের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযানে সংগৃহীত সব তথ্যাবলি বিস্তারিতভাবে যাচাই করে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও শিক্ষকরা চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত ক্রয়, ভুয়া বিল-ভাউচার প্রস্তুত, কেনাকাটায় টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুদক গোপালগঞ্জ টিম এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি তথ্য পাওয়া যায়–

১. বিগত সময়ে আসবাবপত্র ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরেজমিনে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বেঞ্চ ক্রয় ও নিম্নমানের মালামাল ক্রয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

২. দুটি পানি শোধনাগার বন্ধ রয়েছে। একটির যন্ত্রপাতি ও পাইপ নিম্নমানের পাওয়া গেছে। পানি শোধনাগার দুটি লাখ লাখ টাকায় তৈরি করে ফেলে রেখে সরকারি অর্থের অপচয় করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শারমিন চৌধুরীকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের শর্ত (বয়স ৩২ এর ওপরে) ভঙ্গ করে নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৩২ বছর হওয়ার কথা থাকলেও বয়স পাওয়া গেছে ৩৩ বছর ৩ মাস।

৪. কফি হাউজ ও লেকপাড়ের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ না করেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ঠিকাদারকে অতিরিক্ত বিল দিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতি করা হয়েছে।

৫. লাইব্রেরিতে ক্রয় করা বিদেশি বইগুলো মূল বই নয় মর্মে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। বিল ভাউচার পর্যালোচনা চলছে।

৬. বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে।

৭. ৭ থেকে ৮ বছর আগে শুরু হলেও অদ্যাবধি মূল গেট নির্মাণ শেষ না করে আর্থিক অনিয়ম করা হয়েছে।

৮. বরখাস্ত উপপরিচালক (সাময়িক বরখাস্ত) তুহিন মাহমুদ সিন্ডিকেট করে কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম করেছেন বলে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। গোপালগঞ্জ শহরে পাঁচ তলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

৯. সহকারী রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম হীরা টেন্ডারবাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪৯টি কম্পিউটার চুরির মাস্টারমাইন্ড তিনি।

এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়ে প্রকাশ্য অনুসন্ধান করার সুপারিশ করেছে দুদক টিম। সেকশন অফিসার শারমিন চৌধুরীসহ নিয়োগ কমিটির তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ আছে সেখানে। অন্যদিকে তুহিন মাহমুদ ও নজরুল ইসলাম হীরার নামে দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ প্রদানেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

আরএম/এসএসএইচ