২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে লিবিয়ায় আটকে পড়া প্রায় ৪৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত আনা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, অবৈধ উপায়ে ইউরোপ বা বিদেশ যাত্রায় আটকে পড়া ৪ হাজার ৮৬৫ জন বাংলাদেশিকে ২০১৪ সালে সরকার বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনে। যার মধ্যে লিবিয়া থেকে ৩ হাজার ১৬৪ জন, লেবানন থেকে ১ হাজার ২৯২, ওমান থেকে ১৮১, তিউনিশিয়া থেকে ১১৭, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ৭০, কম্বোডিয়া থেকে ৩০ এবং জর্ডান থেকে ১১জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

বিগত ২০১১ থেকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৪৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে লিবিয়া থেকে ফেরত আনা হয়। এছাড়া, ২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে ৮৫ জন বাংলাদেশির মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আলম জানান, ২০১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৪৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে লিবিয়া থেকে ফেরত আনা হয়েছে।

ত্রিপোলীর বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য বলছে, বর্তমানে লিবিয়ায় ২১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে কাজ করছেন, যাদের শতকরা ৮০ ভাগেরই বৈধ কাগজপত্র নাই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো চাকরি, বেশি বেতন, উন্নত জীবনযাপনের মিথ্যা প্রলোভনের মাধ্যমে দালাল চক্র অবৈধপথে বিদেশগামী যাত্রীদের একটি অংশকে বিপদগ্রস্ত করছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে গমনকালে আটক হওয়া মানুষের মধ্যে বাংলাদেশিরা তৃতীয়।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ফেসবুক, টিকটক, ইমো, হোয়াটস্অ্যাপ ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দালাল চক্র প্রচারণার জন্য নতুন কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক দালাল চক্র অবৈধ পথে ইউরোপে মানবপাচারের জন্য উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়াকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। এই অবৈধ পথে বিদেশ গমনেচ্ছু অনেকেই জেলখানায় আটক হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে বা নির্মম শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বা মুক্তিপণের মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করে পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে বা ভূমধ্যসাগরে নৌযান ডুবে মারা যাচ্ছে।

জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা, খুলনা, সিলেট, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হবিগঞ্জ থেকে সবচেয়ে বেশি মানব পাচারের ঘটনা ঘটছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপদ বিদেশ গমনের আগে অনেকগুলো বিষয়গুলো খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছে : ভ্রমণ ভিসায় বিদেশ গমনকালে আপনার আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্রসহ ফেরত টিকেট গন্তব্য দেশের ইমিগ্রেশন বিভাগকে প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায়, উক্ত ইমিগ্রেশন পুলিশ আপনাকে ফেরত পাঠাতে পারে। বিদেশে শ্রমিক হিসেবে গমনের পূর্বে অবশ্যই ভিসার সঠিকতা যাচাই, নিয়োগকৃত পদের দায়িত্ব, কর্মঘণ্টা, ছুটি, বেতনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি নিশ্চিত হয়ে বিদেশ গমন করবেন।

পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ বিশেষ করে ক্রোয়েশিয়া থেকে প্রাপ্ত ওয়ার্ক পারমিট যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাইপূর্বক গমন করবেন। সম্প্রতি উক্ত দেশের ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট তৈরি করে প্রতারণা করছে একটি দালালচক্র। দাপ্তরিক কাজে বিদেশ ভ্রমণের পূর্বে অবশ্যই আমন্ত্রণ পত্রের সঠিকতা যাচাই করে নিতে হবে।

ভিসা, পাসপোর্ট ও ওয়ার্কপারমিটসহ যাবতীয় কাগজের একসেট ফটোকপি নিজের কাছে এবং একসেট ফটোকপি পরিবারের কাছে সংরক্ষণ করে রাখবেন। এসব কাগজপত্র পরবর্তীতে সৃষ্ট কোন সমস্যায় প্রয়োজন হতে পারে।

আপনার কোনো আত্মীয়/পরিচিত ব্যক্তি বাংলাদেশি কোনো নিয়োগ এজেন্সি/ব্যক্তির সহযোগিতায় বিদেশগমন করে পাচারের শিকার হলে উক্ত এজেন্সি/ব্যক্তির তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়/ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়/ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রদান করুন। দুবাই, আবুধাবি, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ওমান, বাহরাইন, ইরান, ইরাকসহ অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে অন্য কোনো দেশের জন্য ভ্রমণ ভিসা বা কাজের প্রস্তাব প্রাপ্ত হলে প্রয়োজনে সন্দেহমুক্ত হওয়ার জন্য তা উক্ত দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রস্তাবের সঠিকতা যাচাই করে গমন করবেন।

প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে গত ২০১৫ সালে লিবিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধ করেছিল বাংলাদেশ। প্রায় সাত বছর পর গত ২০২২ সালে বাংলাদেশ আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

এনআই/এআইএস