পদ্মা সেতু দুর্নীতি
ভূমির ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাতে ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সিনিয়র সহকারী সচিব ও দুই সার্ভেয়ারসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আসামিদের বিরুদ্ধে মাদারীপুর জেলার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে সরকারি খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি ও অন্যান্য মালিকানাধীন সম্পত্তির ভুয়া রেকর্ড তৈরিসহ ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৫ মার্চ) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় মাদারীপুরে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. আতিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
আসামিরা হলেন— জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও বর্তমানে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল সহকারী পরিচালক প্রমথ রঞ্জন ঘটক, সার্ভেয়ার রাসেল আহম্মেদ ও নাসির উদ্দিন।
বিজ্ঞাপন
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আলো পত্তনদার, আব্দুল মালেক মৃধা, সুরুজ মিয়া, রাজিয়া বেগম, আব্দুল কাদির কাজী, শাহিন বেপারী, কুলসুম বিবি, আতিকুর রহমান, মিলন শেখ, জিল্লুর রহমান, মনির মিয়া, জোসনা বেগম, আঁখি বেগম, আলম আলী বেপারী, হাছিনা বেগম, আছমা বেগম, আওলাদ হোসেন,ফরিদা বেগম, মতিউর রহমান ও
সুধাংশু কুমার মন্ডল মামলার আসামি হয়েছেন।
আরও পড়ুন
মামলার এজাহারে বলা হয় আসামিরা সরকারি খাস জমি, অর্পিত সম্মপ্তি ও অন্যের মালিকানাধীন সম্পত্তির ভুয়া রেকর্ড সৃজন করে, জাল-জালিয়াতি, দুর্নীতি, প্রতারণা, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২৩টি চেকের বিপরীতে সরকারের ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ১০ বছর আগে নিষ্পত্তি হওয়া আলোচিত পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা পুনরায় তদন্তের জন্য গত ৩১ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকী পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত দরপত্রের অন্যতম দরদাতা এসএনসি লাভালিন ইন্টান্যাশনালকে কার্যাদেশ পাইয়ে দেওয়ার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করায় বনানী থানার মামলা মামলা রুজু করা হয়। পরবর্তী সময়ে তদন্ত শেষে ২০১৪ সালে আদালতে এফআরটি দাখিল করা হয়। ওই মামলা পুনঃপর্যালোচনা করে কমিশন মামলাটি অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় (মামলা নং ১৯) মোট সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেইন ভূঁইয়া, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সাবেক সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, কানাডীয় প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল এ মামলা এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন।
দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক সময় তদন্ত শেষে কমিশন ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলাটি থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেয় দুদক। যা ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালত গ্রহণ করে। দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মীর্জা জাহিদুল আলমের নেতৃত্বাধীন একটি টিম এ মামলাটি তদন্ত করে।
পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলার এজাহারে সন্দেহভাজনের তালিকায় ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। মামলাটির এফআরটির মাধ্যমে তারাও এ অভিযোগ থেকে রেহাই পায়। ওই মামলার এফআরটির বিষয়ে তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান জানিয়েছিলেন, ওই মামলাটি ছিল দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলা। তদন্তে আরও তথ্য পাওয়ার আশায় আমরা মামলা দায়ের করি।
তদন্তকালে দেশে এবং কানাডায় গিয়ে দুদকের তদন্ত দল অভিযান চালায়। দুদক টিম কানাডা গিয়ে কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করে। বিশ্বব্যাংকের আশ্বাসের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হলেও মামলা প্রমাণের জন্য দাতা সংস্থা ও কানাডা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে শেষ পর্যান্ত মামলা থেকে সব আসামিদের অব্যাহতির (এফআরটি) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরএম/এসএম