শহরের বাসযোগ্যতা বিপন্ন করতে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে

শহরের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও বাসযোগ্যতা বিপন্ন করতে ষড়যন্ত্র এখনও চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগরপরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। 

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংস্কার হলেও সমগ্র দেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের নগরায়ণ, নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, ইমারত, নির্মাণ ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালার যৌক্তিক কোনো সংস্কার হয়নি।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ‘গোষ্ঠীস্বার্থে বারবার ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পরিবর্তন : জনস্বার্থ ও বাসযোগ্যতার বিপন্নতা এবং নাগরিকের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এ মন্তব্য করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ’বিভিন্ন নাগরিক, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠন’।

আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ড্যাপ নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল সবসময়ই অপপ্রচারণা চালিয়েছে। ড্যাপ অচিরেই সংশোধন করা হবে, এই বার্তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে ভবন নির্মাণে আগ্রহী ভবন মালিকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ইমারত নকশা ও নির্মাণ সংশ্লিষ্ট অনেক পেশাজীবী নতুন ড্যাপের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভবন নকশায় আগ্রহী না হয়ে ভবন মালিকদের ভিন্ন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

বিআইপির সভাপতি বলেন, ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে বার বার স্বার্থান্বেষী মহলের বাধার কারণে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতে পারছে না। গত দুটি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের পরপরই রিভিউ কমিটি করে ড্যাপ বাস্তবায়নের মূল শক্তিটাই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সরকার উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী মহলের কাছে সামগ্রিক জনস্বার্থ, শহরের বাসযোগ্যতাকে ছাড় দিয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪ এর সংশোধন করা হয় ২০১৫ সালে, যাতে আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নাগরিক সুবিধাদির মানদণ্ড অনেক কমিয়ে ফেলা হয়েছে, ফলে কমেছে পার্ক, খেলার মাঠ, বিদ্যালয় প্রভৃতি নাগরিক সুবিধাদি। শহরের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও বাসযোগ্যতা বিপন্ন করতে ষড়যন্ত্র এখনও চলছে।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং বায়ুমণ্ডল অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, জলাবদ্ধতা, যানজট ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকা অমানবিক শহরে পরিণত হয়েছে। শুধু ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনার জন্য ঢাকা বর্তমানে এমন একটি অবস্থায় এসেছে দাঁড়িয়েছে। যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে ঢাকা শহরের সবুজ এলাকা ও জলাশয় মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছে। গাছ ও বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করাসহ পুরো ঢাকা শহর নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সেন্টার ফর হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবু সাদেক, বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. শায়ের গফুর, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না, জুরাইন এলাকার নাগরিক অধিকারকর্মী মিজানুর রহমান প্রমুখ।

এমএইচএন/এমএন