গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও রবিনটেক্স লিমিটেডের গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ শ্রমিকদের ওপর সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।

গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৌমিত্র কুমার দাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- দলের সহ-সভাপতি খালেকুজ্জামান লিপন, দাউদ আলি মামুন, রোখসানা আফরোজ আশা, বাবু হাসান, শরিফুল ইসলাম দিদার প্রমুখ।

সমাবেশে নেতারা বলেন, রবিনটেক্সের শ্রমিকরা ইউনিয়ন গঠন ও নিবন্ধন করার প্রচেষ্টা শুরু করার পর থেকেই কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের সংগঠিতভাবে মত প্রকাশের অধিকারকে দমন করতে ইউনিয়ন নির্মূল করার কাজ চালিয়ে আসছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় রবিনটেক্স কর্তৃপক্ষ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সহায়তায় শ্রম অধিদপ্তরের ওপর অন্যায় চাপ তৈরি করে শ্রমিকদের ইউনিয়ন নিবন্ধন দিতে বাধা দেয়। শ্রম অধিদপ্তরের এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রম আদালতে আপিল করে যা এখনো বিচারাধীন। ইউনিয়ন নিবন্ধনের প্রক্রিয়া অনিষ্পন্ন থাকা অবস্থায় ইউনিয়ন কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা যায় না কিংবা চাকরির শর্ত পরিবর্তন করা যায় না। শ্রম আইনের এই বিধান স্বত্বেও ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদককে ২৬ ধারায় চাকরিচ্যুত করা অন্যায় দাবি করে ইউনিয়ন নিবন্ধনের কার্যক্রম অমিমাংসিত থাকা অবস্থায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদককে গত চার মাস যাবত কারখানায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। শ্রম অধিদপ্তর ও শ্রম পরিদর্শন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে অভিযোগ করেও শ্রমিকরা এই আইন লঙ্ঘনের প্রতিকার পায়নি।

তারা আরও বলেন, শ্রম প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তায় ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর শ্রমিক নিপীড়ক রবিনটেক্স কর্তৃপক্ষ এই সরকারের সময়েও একইভাবে শ্রমিকদের ইউনিয়নকে নির্মূল করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ, মামলা দিয়ে পুলিশি হয়রানির মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তা আর সক্রিয় সদস্যদের চাকরিচ্যুত করে শ্রমিক ইউনিয়নকে নির্মূল করার কৌশল হিসেবে পরিকল্পিতভাবে উসকানি দিয়ে আসছে। শ্রমিকদের আন্দোলনে ঠেলে দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

ইউনিয়ন কর্মকর্তাসহ প্রতিবাদী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের, ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ ২২ জন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করানো আর পুলিশি হয়রানির মুখে অসহায় হয়ে পড়া ঐ শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে গতকাল ১৫ এপ্রিল রাত দেড়টায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নিজ বাসা থেকে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো কালো আইনে মিথ্যা মামলা দেওয়া ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া প্রমাণ করে বর্তমান সরকারের প্রশাসনও পূর্বের ফ্যাসিস্ট সরকারের পথেই হাঁটছে। 

সমাবেশে অবিলম্বে সেলিম মাহমুদ, সীমা আক্তারসহ রবিনটেক্সের গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তা না করা পর্যন্ত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার সংকোচনের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে দেশের প্রতি প্রান্তে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকার কথা ঘোষণা দেওয়া হয়।

ওএফএ/এমএন