রাজউকের অভিযান
বনশ্রীতে ১১টি নির্মাণাধীন ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও জরিমানা
রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় দিনভর অভিযান পরিচালনা করে ১১টি নির্মাণাধীন ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বৈদ্যুতিক মিটার জব্দ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বিভিন্ন ভবনের ডিজাইনের অতিরিক্ত অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রোববার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার 'এন' ব্লক থেকে এই অভিযান শুরু হয়, চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। রাজউকের উপ-পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিটন সরকার এই অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে রাজউকের একটি এক্সেভটের নিয়ে যাওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
রাজউকের জানায়, ভবন নির্মাণে কেউ নকশা মানেনি, কেউ রাস্তা দখল করেছে, আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করেছে, ৫ তলার অনুমোদন নিয়ে ৮ তলা করেছে, পার্কিংয়ের জায়গা রাখেনি— এমন সব অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, বনশ্রীর ‘এন’ ব্লকের নিউ রসূলবাগের আর এস দাগ নং-৭৮১ জায়গায় একটি বেজমেন্টসহ ১০ তলা ভবনের অনুমোদন নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সেখানে বেজমেন্ট ছাড়াই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিপিডিসি) তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা ও বৈদ্যুতিক মিটার জব্দ করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ভবন নির্মাণ মালিককে দ্রুত এসে দেখা করতে বলেন।
পরে দক্ষিণ বনশ্রীর ‘কে’ ব্লকের ১৮ নম্বর রোডে ২১৪ নম্বর প্লটে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দল। সেখানে একটি ভবনের একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছিল। নির্মাণকাজে থাকা ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিক রাজউক অনুমোদিত প্ল্যান দেখাতে পারেনি। ফলে ডিপিডিসিকে তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মিটার জব্দের নির্দেশ দেন। এরপর ১৯ নম্বর রোডের ১৭২ নম্বর প্লটেও একই অবস্থা দেখে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মিটার জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৮ নম্বর রোডের ২০২ নম্বর প্লটের নির্মাণাধীন ভবন মেপে দেখা যায়, ভবনের সামনে পাঁচ মিটার খালি জায়গা রাখার কথা ছিল, কিন্তু সেটি রাখা হয়নি। এ বিষয়ে যোগাযোগের জন্য মালিকের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অতিরিক্ত অংশ ভাঙার নির্দেশ দেন। পরে রাজউকের এক্সকেভেটর দিয়ে সেটি ভাঙা হয়।
দুপুর ১২টায় যাওয়া হয় একই সড়কের ১৯১ নম্বর প্লটে। ছোট ভবনটির সামনে ও পাশে নির্ধারিত জায়গা রাখার কথা থাকলেও সেটি রাখা হয়নি। পরে সেই অতিরিক্ত অংশ ভাঙার নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এরপর দুপুর একটার দিকে ১৫ নম্বর রোড়ে শুরুতে ৩৪৪-৪৫ নম্বর প্লটে নির্মাণাধীন ভবনের কলাম ও আন্ডারগ্রাউন্ড র্যাম্প ভেঙে দেওয়া হয়। অভিযাত্রিক দল জানায়, বড় ভবন হওয়ায় সামনে ১০ মিটার জায়গা থাকার কথা ছিল। কিন্তু আমরা মেপে ৫ মিটার মতো পেয়েছি। এছাড়া আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার জন্য গাড়ির র্যাম্প ছোট করে বানিয়ে সড়কের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিযানের বিষয়ে রাজউকের উপ-পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিটন সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে রাজউকের অভিযান চলছে। ডিজাইন প্ল্যানের বাইরে অতিরিক্ত অংশ আমরা ভেঙে দিচ্ছি। অভিযুক্ত প্রত্যেকেরই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মিটার জব্দ করা হয়েছে ডিপিডিসির মাধ্যমে। অভিযুক্তরা তাদের সংশোধন করে রাজউক চেয়ারম্যান মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ লাগাতে পারবেন।
একই রোডের অনেক পুরোনো ভবনের সামনে জায়গা রাখা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করার জন্য নতুন যেসব ভবন হচ্ছে, সেসব ভবন যেন অতিরিক্ত জায়গা নিয়ে করতে না পারে, আমরা সেই বিষয়টি এখন তদারকি করছি। আর যেসব ভবন অনেক আগেই হয়ে গেছে, তাদের কীভাবে আইনের আওতায় আনা যায় আমাদের নীতিমালার কাজ চলমান আছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রাজউকের এই অভিযান চলছে ও চলবে।
অভিযানে অংশ নেন রাজউকের অথরাইজড অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ সাব্বিরুল ইসলাম ও ইমারত পরিদর্শক সুমন আহম্মেদ। এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা এখানে উপস্থিত আছেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারাদিনে ১৫টি নির্মাণাধীন ভবনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। ১১টি নির্মাণাধীন ভবনে রাজউক অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় করায় আংশিক অপসারণসহ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এমএইচএন/এআইএস