উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীকে ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ অভিহিত করে পররাষ্ট্রসচিবের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দেশের ৩০ নাগরিক। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক আইনত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীকে ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ হিসেবে উল্লেখ করা কেবল ভুলই নয়, বরং ন্যায়বিচারের নীতিরও লঙ্ঘন।

শনিবার এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।

গত ১৭ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় পরামর্শ সভায় (এফওসি) বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিকে বাংলাদেশে ‘আটকে পড়া পাকিস্তানিদের’ প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য অনুরোধ জানান। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীকে ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ হিসেবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান সৃষ্টির আগে ও পরে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর পূর্বসূরিরা ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলায় বসতি স্থাপন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক কমিটি ফর রেডক্রসের (আইসিআরসি) সহায়তায় এ জনগোষ্ঠীকে দেশের বিভিন্ন জেলার ১১৬টি ক্যাম্পে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া হয়। ২০০১ সালের এক রিট আবেদনের রায়ে হাইকোর্ট বাংলাদেশের উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্বের প্রশ্নের মীমাংসা করেন এবং এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন।

ওই রায়ের আলোকে বাংলাদেশের উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নাম যথাযথভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তাদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেন, পররাষ্ট্রসচিব তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতি থেকে ‘আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের দাবি’ অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীকে ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ শব্দবন্ধে অভিহিত করা বন্ধ করা হোক।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- সারা হোসেন, রেহনুমা আহমেদ, শহিদুল আলম, সায়দিয়া গুলরুখ, রেজাউর রহমান লেলিন, ফারজানা ওয়াহিদ, হানা শামস আহমেদ, অরূপ রাহী, ফিরদৌস আজিম, মাহমুদুল সুমন, বীথি ঘোষ, কাজলী সেহরীন ইসলাম, নাজনীন শিফা, মিজানুর রহমান নাসিম, শিমন রায়হান, নূহু আবদুল্লাহ, মারজিয়া প্রভা, সায়েমা খাতুন, ওমর তারেক চৌধুরী, জান্নাতুল মাওয়া, আরমানুল হক, রেংইয়ং ম্রো, পাভেল পার্থ, নাসরিন সিরাজ, অলিউর সান, মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান, মো. মুক্তাদির রশীদ, সাদিয়া আরমান ও সাদাফ নূর।

এমজে