ফের চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা: সড়কে ময়লার স্তুপ, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নারী নিহত
সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা। বৃষ্টিপাত থামার কয়েক ঘণ্টা পর সড়কে জমে থাকা পানি নেমে যায়৷ তবে সড়কের বিভিন্ন স্থানে জমে রয়েছে ময়লার স্তুপ। এতে করে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পথচারী এবং গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার (২০ মে) দিবাগত রাত ৯টা থেকে নগরের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কোথাও ভারী আবার কোথাও মাঝারি থেকে হালকা, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত স্থায়ী ছিল রাত ১টা পর্যন্ত। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী— বুধবার (২১ মে) বেলা ১২টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যদিও এর মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯টা থেকে ১টার মধ্যে।
বিজ্ঞাপন
পতেঙ্গা অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আজকে (বৃহস্পতিবার) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
এদিকে, বৃষ্টিপাতের কারণে নগরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কোথাও হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। আবার নিচু এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়ির নিচতলায়ও পানি ঢুকে পড়ে। নগরের জিইসি, ২ নম্বর গেট, আগ্রাবাদ, হালিশহর, চকবাজার, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব এলাকায় রাতে জরুরি কাজে বের হওয়া লোকজন যাতায়াতে সমস্যায় পড়েছেন।
আবার বুধবার সকালে জমে থাকা পানি নেমে গেলে সড়কে ময়লা দৃশ্যমান হয়। কোথাও কোথাও ময়লার স্তুপ দেখা যায়। আগ্রাবাদ, কাতালগঞ্জ, দেওয়ান বাজার, চকবাজার, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কে ময়লার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সকালে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের যাতায়াতেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ময়লার কারণে সৃষ্ট দুর্গন্ধে লোকজনকে নাকচেপে চলাচল করতে দেখা যায়।
নগরের বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা শামীম আহমেদ বলেন, প্রতিবার বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। কাল রাতেও বাসায় পানি ঢুকে পড়েছিল। সকালে পানি নামলেও চারপাশে শুধু কাদামাটি আর ময়লার স্তূপ। বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যেতে খুব কষ্ট হয়েছে। এই সমস্যার কোনো সমাধান হবে কি না, সন্দেহ আছে।
আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন, রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলে দুর্গন্ধে নাক বন্ধ করে চলতে হয়। রাতে অফিস থেকে ফিরতে ভয় লাগছিল; রাস্তা কোথায়, ড্রেন কোথায় বোঝা যায় না। এত উন্নয়নের কথা শুনি, কিন্তু একটা বৃষ্টিতেই সব ভেসে যায়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের টনক কখন নড়বে?
সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বুধবার সকাল ১০টায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপ দেখা গেছে। অথচ ভোরে পানি নেমে গেছে। সিটি কর্পোরেশনের লোকজনের কোনো খবর নেই।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আই ইউ এ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ময়লা অপসারণ করে ফেলছি। কোন কোন স্থানে ময়লা আছে আমাকে তথ্য দিন। আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।
খুঁটিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ গেল নারীর
চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাতের কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস (৪৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরের চকবাজার থানার মেহেদীবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চমেক পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক নুরুল আলম আশেক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৮ মে নগরের চকবাজার থানার জিইসি মোড় এলাকায় মেট্রোপলিটন হাসপাতালের পাশে বৃষ্টির পর জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন নিহত হয়েছিলেন। তারা হলেন- মিরসরাই উপজেলার পূর্ব গোলমগরা এলাকার নুর জাহানের ছেলে তৈয়ব (৪৫) এবং কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাবিরপাড়া এলাকার হুমায়ুনের ছেলে রবিউল (১৪)।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে ১৬ হাজার ৭৭১ কোটি টাকার চারটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলোতে খাল পুনঃখনন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, রেগুলেটর স্থাপন এবং সড়ক নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব প্রকল্পের আওতায় থাকা খাল-নালা দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে কোনো সময় নালায় তলিয়ে, আবার কোনো সময় জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে লোকজন মারা যাচ্ছেন।
এমআর/এমজে