বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হেপাটাইটিস সি সংক্রমণের ভয়াবহতা বিবেচনায় বড় আকারে পরীক্ষা ও চিকিৎসা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক মানবিক চিকিৎসা সংস্থা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ)। এরই ধারাবাহিকতায় সংস্থাটি ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ৩০ হাজার হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত শরণার্থীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

শুক্রবার (২৩ মে) মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, হেপাটাইটিস সি একটি নীরব ঘাতক। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গহীন থাকলেও পরবর্তীতে লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। এমএসএফ’র সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রতি পাঁচজনের একজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত—যা পুরো ক্যাম্পজুড়ে আনুমানিক ৮৬ হাজার সংক্রমিত ব্যক্তির অস্তিত্ব নির্দেশ করে।

চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কে সংস্থাটির ডেপুটি মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর ডা. ওয়াসিম ফাইরুজ বলেন, গত আট বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থানরত দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা একপ্রকার বিলাসিতা। কিন্তু এসব বাসিন্দাদের ক্যাম্পের বাইরে চিকিৎসা ব্যয়বহুল, এবং শরণার্থীদের সেখানে যাওয়ার আইনি অনুমতিও নেই। এমন বাস্তবতায় এমএসএফ তাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর মধ্যেই তিনটি নতুন বিশেষায়িত হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা ইউনিট চালু করেছে—যা বালুখালী, জামতলী ও পাহাড়ের উদ্দি ক্যাম্পে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

তিনি আরও বলেন, এ কর্মসূচির আওতায় প্রথমে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা উপসর্গবিহীন রোগীদের শনাক্ত করবেন। এরপর দ্রুত রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিশ্চিতকরণ পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু হবে। এমএসএফ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও জোর দিচ্ছে। ক্যাম্পজুড়ে প্রচার চালিয়ে শরণার্থীদের মধ্যে হেপাটাইটিস সি প্রতিরোধের উপায়, চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহ এবং ওষুধ গ্রহণের নিয়মাবলী সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে ডা. ফাইরুজ বলেন, এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ হলেও, পুরো ক্যাম্পে হেপাটাইটিস সি নির্মূল করার জন্য এটি যথেষ্ট নয়। আমরা আমাদের পরিসর যতটা সম্ভব বাড়াচ্ছি, তবে চিকিৎসাকর্মী, সরঞ্জাম ও অর্থের ঘাটতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আবারও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—এই মারাত্মক সংক্রমণের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশল প্রণয়ন করা হোক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে অনিরাপদ ইনজেকশন পদ্ধতি এবং অস্বাস্থ্যকর চিকিৎসা পরিবেশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেপাটাইটিস সি ছড়ানোর প্রধান কারণ। এমএসএফ এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

টিআই/এমএন