বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ) ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিডিএফ ডায়ালজিক ২০২৫ স্কুল-কলেজ অধ্যায় উদ্বোধন করেছে। গতকাল শুক্রবার শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী এ গ্র্যান্ড স্লাম হবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৪০টি শীর্ষস্থানীয় স্কুল ও কলেজ বিতর্ক দলের অংশগ্রহণে যুক্তি, প্রকাশ ও সমালোচনামূলক চিন্তার মহোৎসব, যার লক্ষ্য হলো তরুণ কণ্ঠে একটি জাতীয় সংলাপের সূচনা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা তরুণদের নেতৃত্বে বিতর্ক ও সংলাপের রূপান্তরমূলক শক্তিকে তুলে ধরে বলেন, এমন উদ্যোগ একটি ন্যায়ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যতমুখী সমাজ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সভাপতি এবং ডায়ালজিক ২০২৫-এর অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী প্লাবন গঙ্গোপাধ্যায়। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- দ্য আর্থের প্রতিষ্ঠাতা ও ভাইস চেয়ারম্যান শাকিলা সাত্তার তৃণা, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) যৌথ পরিচালক (গবেষণা) সানজিদা রহমান, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবদুল মতিন এবং বিডিএফের সাবেক সভাপতি ও খ্যাতিমান গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুন নূর তুষার।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্লাবন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বিডিএফ কেবল প্রতিযোগিতার আয়োজক নয়, আমরা একটি জাতীয় মঞ্চ নির্মাণ করেছি যেখানে তরুণরা মনোযোগ দিয়ে শোনে, নৈতিকভাবে যুক্তি তুলে ধরে এবং নির্ভীকভাবে কথা বলে। আজকের খণ্ডিত সময়ে এই তরুণদের সম্মেলন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শ্রদ্ধাশীল ও গঠনাত্মক সংলাপের মধ্যেই রয়েছে সত্যিকারের পরিবর্তনের সম্ভাবনা।

ডা. আবদুন নূর তুষার বলেন, বিতর্ক কেবল একটি দক্ষতা নয়, এটি একটি মানসিকতা যা সহানুভূতি, বৌদ্ধিক নম্রতা ও সত্যের নিরন্তর অনুসন্ধানে গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, বিডিএফ তরুণদের শুধু মঞ্চে কথা বলতে নয়, অর্থবহ আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাজ বদলাতে উদ্বুদ্ধ করছে।

শাকিলা সাত্তার তৃণা জলবায়ু ন্যায়বিচার ও কমিউনিটি ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং তরুণদের আহ্বান জানান যে, তারা যেন তাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর সাথে যুক্ত হয়। অন্যদিকে, সুনজিদা রহমান প্রমাণভিত্তিক যুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, আজকের তরুণরাই আগামী দিনের নীতিনির্ধারক। 

মো. আবদুল মতিন বলেন, শব্দের কোলাহলে ভরা এই সময়ে যারা বিতর্ক বেছে নিয়েছে, তারা আসলে চিন্তার পথকে বেছে নিয়েছে।

বিডিএফ ডায়ালজিকের মূল ভাবনা হলো—তথ্যভিত্তিক গণতন্ত্র, পরিবেশ, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তরুণদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও যুক্তির মাধ্যমে মতভেদ মোকাবিলার ক্ষমতার ওপর। তিন দিন ধরে প্রতিযোগীরা বিতর্কের নানা রাউন্ডে অংশ নেবে, যেখানে আলোচ্য বিষয়গুলো সমাজের প্রচলিত ধারা চ্যালেঞ্জ করবে, গভীর চিন্তায় আহ্বান জানাবে এবং ভিন্ন মতকে উদযাপন করবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হয় একটি আহ্বানের মাধ্যমে সেটা হলো- জয়ের জন্য নয়, বরং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সেতুবন্ধ গড়ে তোলার, নিজেদের চ্যালেঞ্জ করার এবং একটি গভীরতর জাতীয় সংলাপে অবদান রাখার প্রতিজ্ঞা নিয়ে। 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বিডিএফের হেড অব পার্টনারশিপ এইচ. এম. সাবির নূর এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নাঈম আহমেদ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিডিএফের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল মেহেদী।

এমএ