ইনফোগ্রাফ / ঢাকা পোস্ট

কোরবানিকে কেন্দ্র করে দেশে গবাদিপশুর অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে কঠোর রয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বিজিবির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা প্রশাসন, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা সমন্বিতভাবে কাজ করবে।

সম্প্রতি সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানির পশুর অবাধ চলাচল ও পরিবহন নিশ্চিত করতে প্রস্তুতিমূলক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গত কয়েক দশক ধরে কোরবানিতে বিদেশি বিশেষ করে ভারতীয় গরুর প্রাধান্য ছিল। তখন কোরবানি উপলক্ষ্যে গড়ে ২৪ থেকে ২৫ লাখ গবাদিপশু দেশের বাইরে থেকে আসত। ধীরে ধীরে সেই চিত্র পাল্টেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশীয় পশুই কোরবানির চাহিদা মেটাচ্ছে, ফলে আমদানির প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে।

কঠোর নজরদারিতে থাকবে সীমান্ত

অবৈধ গবাদিপশুর অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তে কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, দেশে গবাদিপশুর অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ থাকবে। এ লক্ষ্যে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বিজিবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা প্রশাসন, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমন্বিতভাবে কাজ করবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, বিজিবি, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বলেও জানানো হয়। 

পশু পরিবহনেও থাকবে বাড়তি সতর্কতা

সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, পরিবহনকালীন পশু ও পশু বিক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ট্রাক ছিনতাই প্রতিরোধ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু বিক্রয় ও অর্থ লেনদেন এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে গবাদিপশুর অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার যৌথ সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

নৌপথে পরিবহনের সময় কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ছিনতাই রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পশু পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (বিজিবি এবং বাংলাদেশ পুলিশ), জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর যৌথ কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলেও এতে জানানো হয়।

কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, সারা দেশে কোরবানি পশুবাহী যান চলাচলে নির্ধারিত পশুরহাটের ব্যানার প্রদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পশু পরিবহন ও বাজারে বিক্রয়ের জন্য অবস্থানকালীন পশুর ক্ষেত্রে প্রাণিকল্যাণ আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। কোরবানির পশু পরিবহনের সুবিধার্থে গত বছরের ঈদুল আজহার ধারাবাহিকতায় ক্যাটেল স্পেশাল-১ নামে চারটি ট্রেন সুবিধা অব্যাহত থাকবে। 

পশুর হাটে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা 

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সারা দেশের সব হাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল টিমের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় স্টল বরাদ্দ থাকবে। এ দুই সিটি কর্পোরেশনসহ দেশব্যাপী সব কোরবানির পশুর হাটে দায়িত্ব পালনের জন্য ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। এসব মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম (হটলাইন-১৬৩৫৮) ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। কেন্দ্রীয় সমন্বয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, স্থিরচিত্র ভিডিও ধারণ, সেবা কার্যক্রম রেকর্ড ও কোরবানির পশু পরিবহনে সুবিধা-অসুবিধা, বাজারের কোনো দুর্ঘটনা ইত্যাদি কন্ট্রোল রুমে রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পশুর হাটে প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সমন্বয়ে রিজার্ভ টিম গঠন করা হবে।

কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, সড়কের ওপরে বা আবাসিক এলাকাসহ যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাই না করে যথাসম্ভব নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করতে হবে, যাতে পরিবেশ দূষণ না হয়। এছাড়া পরিবেশের সুরক্ষার জন্য নাগরিকরা যেন নিজ উদ্যোগে বর্জ্য পরিষ্কার করে সেজন্য সিটি কর্পোরেশনসহ জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নেবে।

কোরবানিযোগ্য প্রাণী ১ কোটি ২৪ লাখ

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এবার দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। এর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া ও ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীর প্রাপ্যতা রয়েছে।

মন্ত্রণালয় বলেছে, এ বছর ২০ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন, দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি গবাদিপশু থাকায় এ বছর কোরবানি ঈদের জন্য পশু আমদানি করা হবে না। এ ছাড়া অবৈধ পথে কোনোভাবেই গবাদিপশু প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

আগের বছরগুলোর চিত্র

২০২৪ সালে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮টি পশু কোরবানি হয়, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১০৬টি বেশি।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা দেশে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি হয়েছিল। ২০২২ সালে কোরবানি হয়েছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু।

২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয় ঢাকা বিভাগে। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ঢাকা বিভাগে ২৫ লাখ ২৯ হাজার ১৮২টি, রাজশাহী বিভাগে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১১১টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৫২০টি, রংপুর বিভাগে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৩টি, খুলনা বিভাগে ১০ লাখ ৮ হাজার ৮৫৫টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৩৮টি, সিলেট বিভাগে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪২টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫১৭টি পশু কোরবানি হয়।

কোরবানি হওয়া পশুর মধ্যে ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫৯টি গরু। ১ লাখ ১২ হাজার ৯১৮টি মহিষ। ৫০ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৯টি ছাগল। ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৪৯টি ভেড়া। ১ হাজার ২৭৩টি অন্যান্য পশু ছিল।

এসএইচআর/এমজে